কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে

সেমিনারে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সামজিক নিরাপত্তা খাতে দরিদ্রতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ভাতাভোগীদের ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্থানীয় সরকার নেই। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। আমরা জাতীয় পর্যায়ে একটা রেজিস্ট্রার তৈরি করতে চাই।

গতকাল সোমবার রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এ ছাড়া অতিথি ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন, জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ত্রেৎজা ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছন, ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা যত দরিদ্র, তার চেয়ে বেশি দরিদ্র আয়ের দিক থেকে। প্রতি বছর এই দরিদ্রের হার বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দারিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছে। তাদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তারা দরিদ্র হয়ে যেতে পারে। কিছু মানুষ নাক বরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। সামান্য ঢেউ এলেই তারা তলিয়ে যাবে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির। এটি আমাদের থাকতে হবে। আমরা একদম গরিব দেশ না, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে স্কুলসেবা ও স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। এটাই মৌলিক ন্যায়বিচার। যার জীবন ধারণেরই কোনো উপায় নেই, তার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো লাভ নেই।

ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কোনো দেশ এত গরিব হতে পারে না, যে তার সব মানুষের জন্য অন্তত জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এখন তো আমাদের কোনো অজুহাত দেখালে চলবে না যে, আমরা সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারব না। ফলে এই দারিদ্র্য দূর করা আমাদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশে কিছু দারিদ্র্যঘন এলাকা আছে। রংপুর একসময় মৌসুমি দারিদ্র্যঘন এলাকা ছিল। এই মৌসুমি দারিদ্র্য মঙ্গা হিসেবে পরিচিত। ২০০৩-০৫ সালের দিকে মঙ্গা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। আগে তো সরকার মঙ্গার কথা অস্বীকার করত। সংবাদমাধ্যমের কারণেই সরকার মঙ্গাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মঙ্গা নিরোধের জন্য অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি ক্ষুধা এখন অতটা আর নেই, তবে দারিদ্র্য আছে।

দেশের আর কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্যঘন এলাকা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর মতো জেলায় নতুন এসব অঞ্চল তৈরি হয়েছে। তাদের লক্ষ্য করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমরা এই সরকার মাত্র কয়েক মাসের জন্য আছি। তা সত্ত্বেও আমরা পথনকশা তৈরি করে দিতে চাই। সেটা করা গেলে ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের সুবিধা হবে। সেখান থেকে তারা শুরু করতে পারবে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্য কমানো। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা কমাতে সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরি করা প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, গত এক দশকে জিডিপিতে আমরা বেশ উন্নতি করেছি, প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আমাদের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনের কারণ ছিল সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা, ন্যায়বিচার না থাকা। বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। বন্ড, বীমাসহ কিছু মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারকে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। সরকার গত দশক ধরে এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট এই লক্ষ্যগুলোর প্রতি অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। এই বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১.৮৭ শতাংশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল প্রশ্নে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা শুরু

জীবিত থাকতে নিজের কবরের জায়গা নির্ধারণ করা কি জায়েজ?

অনুশীলনে প্রতিদিন ১৫০ ছক্কা হাঁকানোর দাবি করা ক্রিকেটারের অবসর ঘোষণা

বিমানবন্দরে স্টাইলিশ লুকে দীপিকা, ভিডিওতে মুগ্ধ ভক্তরা

আফগানিস্তানে ভূমিকম্প : দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছানোই চ্যালেঞ্জ

কার্লসেনকে হারানো মুগ্ধ অর্থ সংকটে

ট্রাইব্যুনালে আজ সাক্ষ্য দেবেন রাজসাক্ষী মামুন

মাদ্রাসায় পড়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম শরীফ  

দ্রুত বিচার শেষ করতে বাড়তে পারে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা : আসিফ নজরুল

খালেদা জিয়াকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবি

১০

‘আমরা তো অ্যাটাকিং ক্রিকেট খেলছি, আরও অ্যাটাকিং চাচ্ছেন’

১১

রণবীরের মুখটা ছিল একেবারে স্বাস্থ্যকর: ধনশ্রী বর্মা

১২

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল ইসলামের পদ স্থগিত 

১৩

কোটি টাকা হাতিয়ে আত্মগোপন জনপ্রতিনিধি, জীবন দিলেন ব্যবসায়ী

১৪

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শনে ২ উপদেষ্টা

১৫

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার

১৬

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘জনযুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত ভেনেজুয়েলা, মাদুরোর হুঁশিয়ারি

১৭

নুরকে দেখতে হাসপাতালে শামা ওবায়েদ, চাইলেন সুষ্ঠু তদন্ত

১৮

জাগপা সভাপতির ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের নিন্দা

১৯

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বেলজিয়াম, ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি

২০
X