ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাধীন উস্থি ইউনিয়নে মোগল আমলের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে তেরশ্রী জামে মসজিদ। কিন্তু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ৬০০ বছরের অসাধারণ নির্মাণশৈলীর এ প্রাচীন স্থাপনাটি এখন ধ্বংসের মুখে। মসজিদটির সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, মোগল আমলে আনুমানিক ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এ মসজিদটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চুন-সুরকি ও মসুর ডালের মিশ্রণে নির্মিত এক গম্বুজবিশিষ্ট তেরশ্রী জামে মসজিদটির আয়তন ২২ ফুট বাই ২২ ফুট। মসজিদের চার কোণে ও পাশের খামের ওপর মোট আটটি ছোট মিনার, দুটি দরজা ও দুটি জানালা রয়েছে। দেয়ালের ব্যাস চার থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত এবং দেয়ালে শোভিত রয়েছে গুল্ম, লতাপাতা ও ফুলেল কারুকার্য, যা প্রাচীন ইসলামী স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের মেহরাবে ছয়টি কুঠুরি রয়েছে। একসময় নামাজ আদায়ের জন্য মাত্র দুটি কাতার থাকলেও, মুসল্লিদের সুবিধার্থে ২০০১ সালে সামনের জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করে আয়তন বাড়ানো হয়, তবে পুরোনো কাঠামোটি অপরিবর্তিত রাখা হয়।
যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হতে বসেছে এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি। অর্থাভাব ও জনবল সংকটে এখন মসজিদটি টিকে আছে শুধু ইমামের একক প্রচেষ্টায়। তিনি ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম—সব দায়িত্ব একাই পালন করছেন।
তেরশ্রী জামে মসজিদের ইমাম বলেন, এ মসজিদ ৬০০ বছরের পুরোনো। এখানে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গর্ববোধ করি। সরকারের কাছে অনুরোধ, মসজিদটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় অনুদান ও জনবল সহায়তা দেওয়া হোক।
মসজিদটির সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম বলেন, মুরব্বিদের মুখে শুনেছি ৬০০ বছর আগে বাদশা জাহাঙ্গীরের আমলে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
এলাকাবাসী শফিউল আলম বলেন, এত প্রাচীন মসজিদ ময়মনসিংহে আর নেই। এলাকাবাসী হিসেবে এ মসজিদ নিয়ে গর্ববোধ করি এবং মসজিদটি রক্ষা করার জন্য ভালোভাবে উন্নয়ন প্রয়োজন।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, সঠিক সংরক্ষণ ও আধুনিকায়ন করা হলে তেরশ্রী জামে মসজিদ হয়ে উঠতে পারে ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান, যা বহন করবে বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্য ঐতিহ্যের দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
মন্তব্য করুন