রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ নুর উদ্দিন আবীর। লোকপ্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী রাবি শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি। রাকসুকে দলমুক্ত, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও অংশগ্রহণমূলক প্ল্যাটফর্মে রূপ দেওয়ার অঙ্গীকার করে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি। ছাত্রবান্ধব নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শক্ত অবস্থান গড়েছেন আবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো চিফ আমজাদ হোসেন শিমুল
কালবেলা: ছাত্ররাজনীতিতে কীভাবে যুক্তে হলেন?
আবীর: কলেজে ওঠার পর ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, কোনো সমস্যায় পড়লে একসঙ্গে মোকাবিলা করা, ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ে অধিকার আদায়ের মতো বিষয় আমাকে ছাত্ররাজনীতিতে আসার প্রেরণা জুগিয়েছে।
কালবেলা: রাকসু নির্বাচনে অন্য ভিপি প্রার্থীদের চেয়ে নিজেকে আলাদা ভাবছেন কোন বিবেচনায়?
আবীর: আমরা যারা প্রার্থী, সবাই রাবিয়ান। এখানে আমি যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিচার করব না, আমরা সবাই মেধাবী। আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সবাই লক্ষ করেছে। আমি ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলাম। দীর্ঘদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি এবং এজন্য নিপীড়নের শিকারও হয়েছি। তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সিট-বাণিজ্য, অন্যায়-নিপীড়ন ও আধিপত্য বিস্তার করত; তার বিরুদ্ধেই আমি প্রতিবাদ করেছি। এজন্য নিপীড়িত হয়েছি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা পেয়েছি। তাই আমি মনে করি, সেই ভালোবাসার প্রতিফলন হিসেবে শিক্ষার্থীরা আমাকে ভিপি হিসেবে মনোনীত করবেন।
কালবেলা: ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে যদি ভিপি নির্বাচিত হন, তাহলে রাকসুর কার্যক্রমে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কী কোনো প্রভাব পড়বে?
আবীর: আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছি। আমরা ভয়ভীতিমুক্ত, নেতিবাচক রাজনীতিমুক্ত ও আধিপত্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। তাই আমি মনে করি, রাকসু ও আমার সংগঠনের লক্ষ্য সাংঘর্ষিক হবে না—উভয়ের লক্ষ্যই শিক্ষার্থীদের কল্যাণ।
কালবেলা: রাকসু পুনর্গঠনের পর শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনেক বেশি—আপনি নির্বাচিত হলে প্রথম তিনটি কাজ কী করবেন?
আবীর: দীর্ঘ ১৭ বছর ক্যাম্পাসগুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ যে নিপীড়ন চালিয়েছে, তাতে ছাত্ররাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীরা আস্থা হারিয়েছে। আমার প্রথম কাজ হবে, ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, আবাসন সংকট নিয়ে কাজ করব। রাবির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হলের বাইরে থাকেন, আমরা তাদের আবাসনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করব এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতার বিষয়েও পরিকল্পনা আছে। তৃতীয়ত, প্রশাসনের মাধ্যমে রাবির রাস্তাঘাট মেরামত ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রাবি রেলস্টেশন পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেব।
কালবেলা: আপনি রাকসুকে কীভাবে দলমুক্ত ও ছাত্রবান্ধব রাখতে চান?
আবীর: আমি একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করি, সেটা ঠিক। কিন্তু রাকসুর ভিপি তো দল থেকে নয়, নির্বাচিত হবে শিক্ষার্থীদের ভোটে। তাই শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে আমি তো তাদের ম্যান্ডেটেই কাজ করব।
কালবেলা: ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা কী?
আবীর: আমাদের প্যানেল দেখলেই বোঝা যায়, আমরা নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে কতটা আন্তরিক। আমাদের এজিএস নারী, ক্রীড়া সম্পাদক নারী—এ ছাড়া অন্য যে কোনো প্যানেলের চেয়ে আমরা বেশি নারী প্রার্থী দিয়েছি। নারীদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ দুটি ক্ষেত্রেই আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।
কালবেলা: ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে?
আবীর: ভিন্নমতের প্রতি আমরা সব সময় সহানুভূতিশীল। আমি তাদের আহ্বান করব—আমরা মানুষ, ভুল হতে পারে। আমরা ভুল করলে সমালোচনা করুন, আমরা শুধরে নেব। আপনাদের ভুল হলে আমরা সমালোচনা করব, আপনারা সেটি নেতিবাচকভাবে না নিয়ে সংশোধন করবেন। কেউ কারও বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা প্রতিহিংসা ছড়াব না।
কালবেলা: যদি ভিপি নির্বাচিত না হতে পারেন; তাহলে কি শিক্ষার্থীরা আপনাকে পাশে পাবে? আবীর: যদি নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্তভাবে হয় এবং শিক্ষার্থীরা তার পরও যদি আমার পক্ষে রায় না দেন—আমি সেটা সানন্দে মেনে নেব। তবে আমার ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা বাস্তবায়নে যে-ই নির্বাচিত হোক না কেন, তার পাশে থেকে কাজ করে যাব।
কালবেলা: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী হবে?
আবীর: দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে—এটা আমাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া ও আন্দোলনের ফসল। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান, এই নির্বাচন উৎসবমুখর করে তুলুন। সবাই যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন এবং দলমত নির্বিশেষে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন।
মন্তব্য করুন