জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:১৭ এএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সমাধান খুঁজছেন গার্মেন্ট মালিক-শ্রমিক নেতারা

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণকে কেন্দ্র করে চলমান অস্থিরতার সমাধান খুঁজছেন গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড চলতি মাসেই বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। ইতোমধ্যে মালিক পক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং শ্রমিক পক্ষ ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার মজুরি প্রস্তাবনা বোর্ডের কাছে জমা দিয়েছে। তবে মালিক পক্ষ তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসে মজুরি আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক কত টাকা বাড়বে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য তারা জানায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের বোর্ড সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মজুরি বোর্ডে বসে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।

এদিকে মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে ন্যূনতম মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবিতে সপ্তাহখানেক ধরে আন্দোলন করছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, আশুলিয়া এবং রাজধানীর মিরপুরের কিছু তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। প্রায় প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে। কারখানা ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। কারখানা মালিকদের দাবি, শ্রমিকদের বিহরাগত দুষ্কৃতকারীরা আন্দোলনের উসকানি দিচ্ছে। এতে ১০০ ভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

গতকাল শনিবারও আশুলিয়া এবং গাজীপুরে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে। আবার কার্যক্রমে থাকা (খোলা) কারখানায় আক্রমণ হয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কারখানা মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। আর এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের শান্ত রাখতে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তৎপর রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

মজুরি বোর্ডের শ্রমিক পক্ষের সদস্য ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমরা শ্রমিক সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্লেষকদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় ও পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবনাটি দিয়েছি। আমরা প্রস্তাবের পক্ষে অনড়। কিন্তু মালিক পক্ষ বলেছে, তারা তাদের প্রস্তাব থেকে সরে মজুরি বাড়াবেন। কত বাড়াবে তা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। তবে আগামী বোর্ড সভায় বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে করি। এর আগে শ্রমিকদের শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। চলতি মাসেই মজুরির বিষয়টি সমাধান হবে।

মজুরির বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে। সরকার নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা সেটিই মেনে নেব। শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন, নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শ্রমিকদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। তাই শ্রমিকরা এমন কিছু করবে না, যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট হয়। শ্রমিক ভাই-বোনদের বলব, এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়। কোনো রকম উসকানিতে আপনারা প্ররোচিত হবেন না। পোশাক শিল্পে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবেন না। দায়িত্বের সঙ্গে নিজ নিজ কাজ করুন। দেশের স্বার্থে উৎপাদনে আমাদের সাহায্য করুন। এ শিল্পটা আমাদের সবার।

সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালবেলাকে বলেন, শ্রমিকদের যে দাবি, সেটি শ্রমিকদের সমস্যা হিসেবে না দেখে বরং বিষয়টিকে মালিক পক্ষের প্রস্তাবনার দুর্বলতা হিসেবে দেখা দরকার। মালিক পক্ষ মজুরি বোর্ডে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা ব্যয়ের ধারে কাছেও নেই। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকরা এক ধরনের হাতাশা থেকে আন্দোলনে নেমেছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আন্দোলন থামানোর যে চেষ্টা, তাও আসলে ঠিক হচ্ছে না। মূলত এটা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা না। এটা হচ্ছে মজুরি সংক্রান্ত। সুতরাং শ্রমিকদের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান দরকার।

তিনি বলেন, মজুরি প্রস্তাবে শ্রমিক পক্ষ ছাড় দিয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সংগঠনের ২৫ হাজার টাকা দাবি ছিল, সেখান থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। এখন মালিক পক্ষের উচিত হবে শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবনা মাথায় রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে দরকষাকষি করা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মিটিংয়ে বসা। সেখান থেকে একটি যৌক্তিক প্রস্তাবনায় নিয়ে আসা।

মালিক পক্ষের প্রস্তাব যদি ডলার (মার্কিন) হিসেবে নিই, তাহলে ২০১৮ সালে ৮ হাজার টাকা। তখন ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। সেই সময়ে ৮ হাজার টাকায় ৯৪ ডলার হতো। এখন ১০ হাজার ৪০০ টাকা যদি মজুরি হয়, ১১০ টাকা ১ ডলার হিসাবে মজুরি দাঁড়ায় ৯৫ ডলার। অর্থাৎ মালিক পক্ষের প্রস্তাবে মাত্র ১ ডলার বেড়েছে। সুতরাং এ ধরনের প্রস্তাব কোনো ধরনের মূল্য বহন করে না এবং এটির ওপরে কী পরিমাণ বাড়ানো হবে সেটিও বর্তা দেয় না। সেজন্য মালিক পক্ষকে একটি যৌক্তিক প্রস্তাবনা দিতে হবে। যাতে সেটির ওপরে আলাপ-আলোচনা হয়। আর যদি সমস্যার সমাধান না হয় সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেও যাওয়া যেতে পারে। এর আগে শ্রমিক, মালিক ও সরকার প্রতিনিধি মজুরি বোর্ডে বসে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের কাছাকাছি আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবনাকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে ধরে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

সিপিডির গবেষণা প্রস্তাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিপিডি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, এটিও যদি মালিক পক্ষ বাস্তবায়ন করে, সে ক্ষেত্রে ক্রেতারা যদি ৭ সেন্ট (ডলার) বাড়িয়ে দেন, তাহলে মজুরি মেটানো সম্ভব। আমরা মনে করি, মজুরি মেটানোর দায়-দায়িত্ব শুধু মালিকদের না, এটা ক্রেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সাম্প্রতিককালে তারা (বিদেশি ক্রেতা বা প্রতিষ্ঠান) সরকার, মালিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, জাতীয় পর্যায়ে যে মজুরি নির্ধারিত হবে, সেটি তারা বাস্তবায়ন করবে। সুতরাং সেই দিক থেকে আমি মনে করি, মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বঞ্চিত না করে বরং তাদের প্রয়োজনের নিরিখেই মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

সম্পাদনা: রাসেল

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানের বন্যায় নিহত ছাড়াল ৪০০

ছদ্মবেশে ছিনতাইচেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩ নারী

মোহাম্মদপুরের সেই বিতর্কিত ওসিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি 

২২৯ বল বাকি থাকতে ছেলেদের কাছে জ্যোতিদের হার

গাজীপুরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা-মোবাইল ছিনতাই

কবর জিয়ারত করলে বা সালাম দিলে মৃত ব্যক্তি কি টের পান

আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে যশোরে নির্বাচন অফিস ঘেরাও

অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একমত : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

‘দৈত্যকায়’ ফুটবলার পাভেল : কে তিনি, কেন আলোচনায়

মুনিয়া আফরিনের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি, থানায় জিডি

১০

কৃষক দলের সেক্রেটারি শহিদুলের কারামুক্তিতে বাধা নেই

১১

বাড়বে ৯ নদীর পানি, ডুবতে পারে ৬ জেলার নিম্নাঞ্চল

১২

৫১ বছর পর জানা গেল ছেলের হত্যাকারী বাবা, স্ত্রীও নিহত

১৩

ইসরায়েলি রাজনীতিকের ছবি গাজার যোদ্ধা বলে প্রচার, অতঃপর...

১৪

হত্যা মামলায় ৭ জনের যাবজ্জীবনসহ ১৫ জনের কারাদণ্ড

১৫

সীমানা নির্ধারণে নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি : সিইসি

১৬

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানিতে সিইসির সামনেই হাতাহাতি 

১৮

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

১৯

সরে দাঁড়াল জার্সি স্পন্সর, এশিয়া কাপের আগে বিপাকে ভারত

২০
X