দেশে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক) বাড়লেও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী কমেছে। একই সময়ে মাদ্রাসার সংখ্যা কমলেও শিক্ষার্থী বেড়েছে। অন্যদিকে, কারিগরি ও ভোকেশনালে (স্বতন্ত্র) শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান দুটিই বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়েছে।
দেশের শিক্ষার তথ্য নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ শিক্ষা পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২২ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থী বৃদ্ধি ও কম হওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৮ হাজার ৯০৭টি। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের তুলনায় শিক্ষার্থী কমেছে ৪০ হাজার ৫৭১ জন। ওই বছর মোট শিক্ষার্থী ছিল ৮৯ লাখ ৩০ হাজার ২৪৫ জন। অবশ্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে মাধ্যমিকে এখন মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৯ লাখের বেশি।
২০১৮ সালে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ জন। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জনে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা আরও কমে হয় ১ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজার ১২৬ জন।
২০২১ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ২২ জন। আর ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ৫৬ হাজার ৮৭৯ জন কমে হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৩ জন।
এবারও মাদ্রাসা কমেছে, শিক্ষার্থী বেড়েছে : ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে দেশে মাদ্রাসা ছিল ৯ হাজার ২৯১টি। ২০২২ সালে মাদ্রাসার সংখ্যা ২৩ টি কমে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৬৮টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি। বাকিগুলো বেসরকারি মাদ্রাসা। দেশের মাদ্রাসাগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ জন। আগের বছর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ছিল ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৫২ জন। এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখের বেশি। এ তথ্য বলছে, মাদ্রাসা কমলেও বেড়েছে শিক্ষার্থী।
ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে শুধু সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রাথমিকোত্তর মাদ্রাসাগুলোর তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেখানে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল স্তরে পড়ানো হয়, যা যথাক্রমে সাধারণ ধারার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তরের সমতুল্য।
ব্যানবেইস শুধু শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেয়। কারণ, বিশ্লেষণ করে না। ফলে কী কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে, আর মাদ্রাসায় বেড়েছে, সে বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন থেকে কিছু জানা যায়নি।
কারিগরিতেও বেড়েছে শিক্ষার্থী : এদিকে কারিগরি ও ভোকেশনালেও (স্বতন্ত্র) শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান দুটিই বেড়েছে। দেশের ২ হাজার ৫৪৭টি কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৯৫ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ১০৮ জন। তখন প্রতিষ্ঠান ছিল ২ হাজার ৪৮৯টি।
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেড়েছে। এখন দেশে এ দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৬৪টি। অন্যদিকে, ২০২০ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ১৬০টি।
সব মিলিয়ে এখন প্রাথমিকোত্তর বিভিন্ন স্তর মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮১৬ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৪৫০ জন। অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি করোনাকালে প্রাথমিক স্তরের ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমে গিয়েছে।
মন্তব্য করুন