রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৪৯ এএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোটে ‘না’ বাম দলের

সংলাপের তাগিদ
নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোটে ‘না’ বাম দলের

বাংলাদেশে শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল। আসছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। পাঁচ বছর পর নির্বাচন কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করার কথা। ব্যস্ত থাকার কথা ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে; কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন পরিস্থিতি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার চিন্তা করছে বাম দলগুলো। পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন তাদের প্রধান শর্ত। নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি পূরণ হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে, অন্যথায় নয়। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শুরুরও তাগিদ দিয়েছেন তারা।

এই জোটের সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি ছোট দলসহ আরেকটি সমমনা রাজনৈতিক জোট। এসব দল ও জোটের মধ্যে রয়েছে নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, আব্দুল্লাহ তারেকের নেতৃত্বে ঐক্য ন্যাপ, বেলাল চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে আট দলের সমন্বয়ে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোট। তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদ ছাড়া অন্য দলগুলোর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালে তারা জোটের পক্ষ থেকে ১৫০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। এবারও তাদের জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি আছে। জোটের ব্যানারে বিশিষ্টজনও নির্বাচনে অংশ নেবেন। এবারও অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিতে চায় বাম দলগুলো।

জানা গেছে, সিপিবির সর্বোচ্চ ২০ জন ছাড়া বাম জোটের বা সমমনা দলগুলোর হেভিওয়েট তেমন কোনো প্রার্থী নেই। তা ছাড়া অর্থ ও সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় অনেকেই এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়েছেন। নিশ্চিত পরাজয় জেনে বাম দলগুলোতে দিন দিন প্রার্থী সংখ্যা কমছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের অন্তত পাঁচজন প্রার্থী জানিয়েছেন, নির্বাচন মানেই এখন টাকার খেলা। আর্থিক সংগতি, জনবল থেকে শুরু করে জনমর্থন সবদিক থেকেই তারা পিছিয়ে। এর সঙ্গে নির্বাচনে বড় বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের শক্তির মহড়ায় মাঠে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সব মিলিয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দল বা জোটের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকের পিছুটান রয়েছে।

গণতান্ত্রিক বাম জোটে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি। এর মধ্যে সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় সবচেয়ে এগিয়ে সিপিবি। এর বাইরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রশ্নে তিনি দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবি মেনে নিয়ে একটু সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে পারে। অন্যথায় আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।

এ ছাড়া বাসদের নেতৃত্বে আছেন সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ রানা। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে আছেন আব্দুল আলী। মূলত তারাই নিজ নিজ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১৯৯১ সালের পর বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো দলই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন পায়নি।

জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, পুরো নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। গত দুটি নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল না। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দাবি করছি।

তিনি বলেন, মন্দের ভালো নির্বাচন করতে চাইলে, তা দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। নির্বাচনকালে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তদারকি সরকার সমাধানের একমাত্র পথ। সরকারের একদফা নির্বাচনের প্রস্তুতির বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। সরকার ও ইসির উচিত সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করা। এতে ব্যর্থ হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারের।

বাম জোটের নেতারা মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে তপশিলের পরও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সংলাপে ডাকা হলে এজেন্ডা দেখে অংশ নেবেন বলেও জানান তারা। সংলাপ ছাড়া একতরফা প্রহসনের নির্বাচন ঠেকাতে বাম জোটের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করার কথাও জানান তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজা অভিমুখে যাচ্ছে আরও ১১ জাহাজ

টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন একাদশ 

বিএনপির বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে লাভ হবে না : মাহবুবুর রহমান

ইসলামকে ক্ষমতায় নিতে নারী সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে : চরমোনাই পীর

নির্বাচন নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ী একটি দল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে : মির্জা আব্বাস 

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না সিলেটের যেসব এলাকায়

তারুণ্যের শক্তিই দেশে পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি : জুয়েল

জাতিসংঘ সভাপতির পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে কৃতজ্ঞতা ফিলিস্তিনের

জুমার নামাজে যাওয়ার পথে প্রাণ গেল ইমামের

জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করলে ভোট চাইতে হয় না : হাসনাত

১০

জিয়াউর রহমান অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন : চসিক মেয়র

১১

কর্মসংস্থান তৈরিতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ

১২

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনগত বাধা নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল

১৩

অনির্দিষ্টকালের অনশন কর্মসূচিতে সুমুদ ফ্লোটিলার আটক অভিযাত্রীরা

১৪

১০০ আসনে প্রার্থী দেবে বাংলাদেশ লেবার পার্টি 

১৫

৭০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করল লালমনিরহাট যুবদলের নেতাকর্মীরা

১৬

‎প্রেম করে বিয়ে, বউকে ঘরে তোলা হলো না খালেকের

১৭

অর্থহীনের নতুন গান ‘উন্মাদ’

১৮

মিউনিখ বিমানবন্দরে রহস্যজনক ড্রোন, আতঙ্কে ফ্লাইট বাতিল

১৯

গর্ভাবস্থায় কী খাবেন, কী খাবেন না? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

২০
X