রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৩, ০২:২৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এত বাস গেল কোথায়

রাজধানীতে পরিবহন সংকট
ঈদের সরকারি ছুটির প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহাসড়কগুলোতে ছিল যানবাহনের চাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ছবি : কালবেলা
ঈদের সরকারি ছুটির প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহাসড়কগুলোতে ছিল যানবাহনের চাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ছবি : কালবেলা

কথা ছিল ঈদযাত্রায় রাজধানীর সিটি বাস যাত্রী নিয়ে আন্তঃজেলা রুটে যাতায়াত করবে না। নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১৪টি সিদ্ধান্তের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম, যা ঘোষণা করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই। বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। রাজধানীর ৩০টিরও বেশি সিটি সার্ভিসের অধিকাংশ বাস ইতোমধ্যেই ঢাকার বাইরে চলে গেছে। এতে ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীতে বাস সংকট দেখা যায়।

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি বলছে, রাজধানীতে বাস কোম্পানির সংখ্যা ৯৭টি। এসব কোম্পানির মাধ্যমে ৫ হাজার ৬৫০টি বাস পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে ৫০ হাজারের বেশি বাসের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। এর মধ্যে বাসের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮১০টি। আর মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজার।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় বাড়তি আয়ের আশায় ৩০টিরও বেশি কোম্পানির অধিকাংশ বাস ঢাকার বাইরে গেছে। গতকাল নগরীর মোট বাসের ১০ ভাগও চলাচল করেনি। যেগুলো চলেছে, সেখানেও যাত্রীদের থেকে আদায় করা হয়েছে ইচ্ছামতো ভাড়া। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলেন, অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।

জানা গেছে, বাহন, মিডলাইন, লাব্বাইক, প্রজাপতি, ভিআইপি, গ্রেট তুরাগ, বিকাশ, অনাবিল, বিকল্প, লাভলী, আট নম্বর, প্রভাতি বনশ্রী, গাজীপুর পরিবহন, বলাকা, রাইদা, তরঙ্গ, অ্যাক্টিভ, অগ্রদূত, আছিম, আজমেরী গ্লোরী, আকিক, আল মদিনা, আকাশ, আল মক্কা, আলিফ, আসমানি, আয়াত, ভিক্টর ক্লাসিক, বৈশাখী, বসুমতিসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে দূরপাল্লার রুটে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাইদা পরিবহনের চালক মানিক কালবেলাকে বলেন, আমাদের কিছু বাস ভাড়া নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে কুমিল্লা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে। তাই রাজধানীতে বাস কম থাকার কথা জানান তিনি।

তুরাগ পরিবহনের কন্ডাক্টর পলাশ বলেন, ঈদ ছাড়া আমাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ নেই। কিছু বাস হয়তো ঢাকার বাইরে যাত্রী নিয়ে চলে গেছে। তাই নগরীতে বাস চলাচল কম।

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ কালবেলাকে বলেন, সিটি সার্ভিসগুলোকে ঢাকার বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য সব পরিবহন মালিকদের ডেকে পৃথক বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি নির্দেশ অমান্য করে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা এ রকম অভিযোগ খুব একটা পাচ্ছি না। আমাদের ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, যারা নির্দেশ অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে বাস চালাবে, সেসব পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানীতে সিটি বাস কমে যাওয়ায় গত সোমবার রাত থেকেই ঈদ বকশিসের নামে ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ করেন যাত্রীরা। কালবেলার পক্ষ থেকে অন্তত ২০টি পরিবহনে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। সাইনবোর্ড থেকে জয়দেবপুর রুটে চলা অনাবিল ও ছালছাবিল পরিবহনকে প্রতি স্টপেজে ১০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। ভিআইপি, রাইদা, বিকাশ, ট্রান্স সিলভা, বিকল্প, স্বকল্প, ঢাকা পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এর বাইরে সাভার, আশুলিয়া, মিরপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জগামী বাস কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে।

এদিকে আন্তঃজেলায়ও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ শুরু হয়েছে সোমবার থেকেই। মঙ্গলবার এই অভিযোগ আরও বাড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মহাখালী থেকে নেত্রকোনাগামী শাহজালাল এক্সপ্রেসে ৪০০ টাকার ভাড়া ৭০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন অনেকেই। নেত্রকোনার এক যাত্রী ১৩৬ নম্বর বাসের বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বাসের সামনে স্টিকারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৪২৭ টাকা লেখা রয়েছে, অথচ ৭০০ টাকা নেওয়া হলেও কেউ কিছু বলছে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-বগুড়া-জামালপুর-শেরপুরের বিভিন্ন বাস কোম্পানির বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একই অভিযোগ মিলেছে সায়েদাবাদ, গাবতলী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের বিরুদ্ধে। জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের পথে বিভিন্ন রুটে সোমবার থেকে যাত্রা ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার অফিস শেষে গার্মেন্ট ছুটি হয়। তখন যাত্রী চাপ বাড়ে সব পথেই। ঘরমুখো মানুষের রীতিমতো ঢল নামে রাস্তা থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত। পরিবহন সংকটের মুখে অনেকেই ট্রাক ও পিকআপে ঘরে ফেরেন। পশুবাহী ফিরতি যানবাহনেও ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে যাত্রী দেখা গেছে। অনেকেই অল্প ভাড়ার কারণে এসব যান ব্যবহার করেন। অথচ পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যারা মন্দিরে হামলা করত তারা দেশে নেই : এটিএম আজহার

চট্টগ্রামে ‘সমুদ্র পরিবেশ রক্ষা ব্যালাস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রযুক্তিগত সেমিনার

‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না’

নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

মেঘনার তীরে দেখা মিলল রাসেল ভাইপারের, অতঃপর...

স্বামীর ছুরিকাঘাতে গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রী নিহত

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে সাভারে ব্যাপক গণসংযোগ

খেলাধুলা চর্চার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে মাদকমুক্ত জাতি : আমিনুল হক

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না : সাইফুল হক

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

১০

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১১

ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজব, যা বললেন ছেলে জয়

১২

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

১৩

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

১৪

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

১৬

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

১৭

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

১৯

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

২০
X