তথ্য গোপনসহ ৯ কোটি ৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সওজের কুষ্টিয়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী জোবাঈদা শাহনূর রশীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. খায়রুল হক এ মামলা দুটি করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৩ জুন দুদক থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পেয়ে একই বছরের ১৬ আগস্ট দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তিনি স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯২ টাকার সম্পদের হিসাব দেন। দুদকের অনুসন্ধানে মোস্তফা কামাল তার স্ত্রীকে দানসহ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ২৬৭ টাকা। বাকি ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার মায়ের দান করা ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা আয়কর নথির ২০০১-০২ করবর্ষ থেকে ২০০৬-০৭ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শন করেন। এ টাকা থেকে তিনি স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা দান করেন, যা তাদের উভয়ের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা হয়।
অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, আবু হেনা মোস্তফা কামালের স্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. জোবাইদা শাহনূর রশীদ দুদকে দাখিলকৃত তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৭৩১ টাকা অর্জনের তথ্য দেন। দুদকের অনুসন্ধানে ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদের নিট সম্পদ, পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ ৪ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৫৭ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া যায়। বাকি ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫২ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি, যা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের জন্য প্রথমে তার মায়ের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন। পরে তা দান হিসেবে নিজের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন এবং মায়ের দানকৃত টাকা থেকে স্ত্রী ডা. জোবাঈদা শাহনূর রশীদকে দান করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্জিত ৯ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার ৯৪৫ টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের চেষ্টা করা এবং স্ত্রী তার স্বামীকে প্রত্যক্ষভাবে এ কাজে সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
মন্তব্য করুন