বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি সংস্থার উদাসীনতায় বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

কমছে মানুষের গড় আয়ু
পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

সড়কের পাশে চলছে উন্নয়নকাজ। খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ইট, বালু ও সুরকি। সড়কে ধুলাবালুর স্তর জমেছে। যানবাহন গেলেই তা কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে বাতাসে। দোকানপাট, দালানকোঠা ও গাছপালাতেও জমেছে ধুলা। কাপড়ে মুখ ঢেকে সড়কের ধুলা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছেন চলাচলকারীরা। গাড়ি ও কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় চারপাশ ছেয়ে আছে। ধোঁয়াচ্ছন্ন এলাকায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। এমন চিত্র রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ধুলা-ধোঁয়ায় বিষাক্ত বাতাসের মধ্যেই কাটছে তাদের দিন।

শুধু শ্যামপুর নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় পথ চলতে নিত্যসঙ্গী ধুলাবালি। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা নগরবাসীর। আদালতের নির্দেশনা থাকলেও দূষণ কমাতে নেই তেমন কোনো তৎপরতা। বাতাসের বিষে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। বেড়েছে চিকিৎসা ব্যয়। তবে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষায় কখনো সতর্কতা জারি করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, বায়ুদূষণের কারণে একদিন আগে দেশে প্রথমবারের মতো সর্তকর্তা জারি করা হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, নানা রকম দূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। দূষিত বায়ুতে থাকার কারণে বছরে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছয় বছর আট মাস কমে যাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের অগ্রাধিকার না থাকা, সরকারি সংস্থাগুলোর অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বের ৯৯ শহরকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের ২০ দিনে একদিনও নির্মল বাতাস পাননি ঢাকাবাসী। বায়ুদূষণে ১২ দিন বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিল, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় ছিল ছয় দিন। ১০ দিন ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু। তা ছাড়া অস্বাস্থ্যকর বায়ুমানে ছিল চার দিন। আর একদিন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা দায়ী ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮, যানবাহন ১০, বায়োমাস পোড়ানো ৮ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ দায়ী। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের জরিপ বলছে, বায়ুদূষণের জন্য অর্ধেক দায়ই তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া ধোঁয়ার। ৪০ শতাংশ দূষণের উৎস খড়, কাঠ, তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ণ বস্তুকণা। বাকি ১০ শতাংশ দূষিত বস্তুকণা আসে ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে।

এদিকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিতে বাতাসের মান যাচাই এবং অ্যালার্ট সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মনিটরিং ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এর আগেও ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেছে সরকার। তবে তাতে কোনো সুফল আসেনি। বায়ুদূষণ রোধে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি প্রকল্পে অন্তত ৭২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর বাইরেও ছোট ছোট কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

দূষণের কারণে রাজধানীবাসীর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, বায়ুদূষণ বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বয়স্ক আর শিশুরা। এ ছাড়া ক্যান্সার, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের অবস্থা আরও জটিল হয়ে থাকে। সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, অ্যাজমা, ত্বকে সমস্যা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ হচ্ছে। দূষণ মোকাবিলায় ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। যারা অসুস্থ এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে হবেন না এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার বাতাসের মান খারাপ হলে সরকারের উচিত তা স্বীকার করা। বায়ুদূষণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্বেগের জায়গায় চিন্তা করা হয়নি। আমাদের চেয়ে কম দূষিত বিশ্বের এমন শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। নাগরিকদের উদ্বেগের মাত্রা জানিয়ে ঘরে অবস্থান করা, কোথাও কোথাও স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা শহরে বায়ুর মান যে খারাপ হয়েছে, কিন্তু সরকারের মনিটরিং সিস্টেম নেই। মাত্র তিনটি এলাকায় কিছু যন্ত্র বসানো আছে, তা দিয়ে পুরো ঢাকার বায়ুর মান জানা যায় না। এলাকাভিত্তিক কোথায় কি বায়ুর মান তা মনিটরিং হয় না, জনগণকে সতর্কতাও দেয় না সরকার। সরকার যদি জনগণকে নিয়ে ভাবত তাহলে কেন বায়ুর মান খারাপ হচ্ছে তা খুঁজে ব্যবস্থা নিত। কিছু ক্ষেত্রে আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। তা শুধু নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বায়ুদূষণের ভয়াবহ অবস্থা যখন জনসমক্ষে আসা শুরু হয়, তখন থেকেই যদি সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করত তাহলে আজকে বায়ুদূষণে আমাদের শীর্ষে থাকতে হতো না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানিই ৮০ শতাংশ দায়ী। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অন্য কারণগুলো হলো, ইটের ভাটা, নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি ইত্যাদি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত রিয়েল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স দেওয়া হচ্ছে। একিআই স্কোর ৩০০-র বেশি হলে বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। অ্যালার্ট পদ্ধতি চালুতে দূষিত জায়গায় বিলবোর্ড স্থাপনের চিন্তা আছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১০

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১১

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১২

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৩

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৪

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৫

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১৬

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১৭

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

১৮

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১৯

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা

২০
X