ইসরায়েলের হামলায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইরানের পরামর্শে চলা গোষ্ঠীটি এখন নিজ দেশেও কোণঠাসা। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক চায় তারা। যেন এটিই তাদের টিকে থাকার শেষ ভরসা। আর এটিও ইরানের পরামর্শেই চাওয়া হচ্ছে।
তেহরানের নেতৃত্বে পরিচালিত এক সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হিজবুল্লাহ নমনীয় আচরণ দেখাচ্ছে। সৌদি আরবের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে একটি রোডম্যাপে এগোচ্ছে প্রক্সি বাহিনীটি।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাওয়া, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কিছুই করতে না পারা এবং লেবাননিরা দিন দিন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় উদ্বেগে হিজবুল্লাহ। বাধ্য হয়ে অবস্থানের এই বদল আনছে গোষ্ঠীটি। লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত মাসের শেষ দিকে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে হিজবুল্লাহর প্রধান নাইম কাসেম বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের আসল হুমকি ইসরায়েল। এ ব্যাপারে সবাইকে একসঙ্গে অবস্থান নিতে হবে। আমরা নিশ্চিত করছি, প্রতিরোধ বাহিনীর অস্ত্র কেবল ইসরায়েলি শত্রুর দিকেই নির্দেশিত। লেবানন, সৌদি আরব বা বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্র বা সত্তার ওপর হামলা করবে না।
সন্ত্রাসবাদী কাজ করায় হিজবুল্লাহের সঙ্গে রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল তিক্ত। ২০১৬ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) হিজবুল্লাহকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ২০২৪ সালের জুনে আরব লিগ হিজবুল্লাহর নাম তাদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়। বিশ্বের অন্যান্য শক্তিও হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
হিজবুল্লাহর মহাসচিব নাইম কাসেম সৌদি আরবের প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ফ্রন্ট গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহ প্রধানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণে আরও আক্রমণ শুরু করেছে। এক সময় ব্যাপক হুমকি-ধমকি দেওয়া গোষ্ঠীটি এর বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারছে না।
কাসেম সৌদি আরবকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দ্বার খোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ সম্পর্কের ভিত্তি তিনটি : বিরোধ নিষ্পত্তি এবং উদ্বেগ মোকাবিলার জন্য সংলাপ, শুধু প্রতিরোধ নয়; বরং ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে স্বীকৃতি এবং অতীতের মতবিরোধ স্থগিত করা।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রতিরোধের (হিজবুল্লাহ) ওপর চাপ কেবল ইসরায়েলের জন্যই লাভজনক। যদি আমাদের নির্মূল করা হয়, তাহলে অন্যান্য রাষ্ট্রেরও পালা আসবে।
সৌদি আরব এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান। রিয়াদ এবং তেহরানের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলমান বৃহত্তর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ এটি। কারণ, ইরানের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ধারণা করা হয়, তেহরানের নির্দেশই পালন করে তারা। এবার ইসরায়েল-মার্কিন হামলায় ব্যাপক ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের পথে হাঁটছে ইরান। সে প্রেক্ষাপটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া হিজবুল্লাহর নমনীয়তার আভাস বিশ্লেষকরা আগেই দিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন