বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ৩৪টি। ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে এক ভাগও অগ্রগতি নেই, এমন প্রকল্পের সংখ্যা অন্তত এক ডজন। ২০ ভাগও অগ্রগতি হয়নি পাঁচটি প্রকল্পের। চারটি প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ ভাগের বেশি। বাদবাকি প্রকল্পে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। গত ১৩ বছরে রেলপথ উন্নয়নে মাত্র তিনটি প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাদবাকি প্রকল্পে দফায় দফায় মেয়াদ বেড়েছে, বেড়েছে খরচও। আলোচিত ঢাকা-কক্সবাজার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ও ঢাকা-টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত রেলওয়ের প্রকল্প অগ্রগতি প্রতিবেদন ঘেঁটে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর পৃথক করা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে। প্রতিষ্ঠার পর ৩৭টি প্রকল্প গ্রহণ করে রেলওয়ে। লক্ষ্য ছিল সারা দেশে রেল যোগাযোগের উন্নতি; কিন্তু গতির প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই চলছে উল্টোপথে। অর্থাৎ গতিহারা এসব সম্ভাবনার প্রকল্পগুলো। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে সব প্রকল্পের গুরুত্ব সমান। কারণ, গুরুত্ব বিবেচনা করেই প্রকল্প নেওয়া হয়। নানা কারণে কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ একেবারেই হয়নি। এ জন্য কয়েকটি প্রকল্পের পিডি পরিবর্তনের চিন্তা রয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ করোনার কারণে থেমে ছিল। এখন স্বাভাবিক। সময় বাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ওই প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ ১২ বছরেও শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও। এরই মধ্যে মেয়াদ বেড়েছে চারবার। ব্যয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের ধীরগতি বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, চলতি বছরের জুনে রেলওয়ের অনেক প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু করোনার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে। বাস্তবতা বিবেচনায় কিছু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে; কিন্তু ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই শুরু হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন মেয়াদ শেষে আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ফিরোজী।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালের ১ জুলাই। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। দ্রুতগতির এ প্রকল্পটির ১১ বছরে অগ্রগতি ৬৮ ভাগ। প্রকল্প কর্মকর্তা নাজনীন আরা কেয়া কালবেলাকে বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনে প্রতি ৩ থেকে ৪ মিনিট পরপর ট্রেন পরিচালনার জন্য দুটি প্রকল্প (ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ লেন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ নির্মাণ) নেওয়া হয়েছিল। দুই অথবা তিন বছরের মধ্যে প্রকল্প দুটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, হয়নি। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে জটিলতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অর্থ ব্যয়ও। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮৪৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকায়।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালে ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সাড়ে চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ৭ ভাগ। প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, কাজ শেষ করতে আরও তিন বছর সময় প্রয়োজন।
রেলওয়ের খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অথচ চলতি এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে প্রায় দুই ভাগ। মেয়াদ বাড়ানো শেষে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও অন্তত তিন বছর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ২০১৬ সালের এক জানুয়ারি শুরু হয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ ভাগ। গতির এই প্রকল্পে আরেক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। যদিও রেলমন্ত্রী বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে। এ প্রকল্পের ৭২ ভাগ অর্থাৎ ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত) ২০১৬ সালের এক জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। সম্প্রতি ৩০১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতির এ প্রকল্পটিও সময়মতো শেষ করা যায়নি।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ১ জুলাই। শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের ৩০ জুন। এপ্রিল পর্যন্ত ৮২ ভাগ কাজ শেষে পালিয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদার। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঠিকাদার পালিয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে প্রকল্পের অর্থ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমরা বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণ করার মধ্যেই তারা লাপাত্তা। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়তে পারে।
মধুখালী হতে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ মে শুরু হয়ে গত বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৪০ ভাগ।
আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৯১ ভাগ। প্রকল্প কর্মকর্তা বদলানো হয়েছে একাধিকবার। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত একভাগও অগ্রগতি হয়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির অবস্থা একেবারেই বেহাল।
পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি ২০১৮ সালের এক জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি এক ভাগও হয়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক আহসান জাবির।
পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে এরই মধ্যে শেষ হলেও আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে এরই মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (রোলিং স্টক সংগ্রহ) প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রথম দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩৪ ভাগ। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (কারিগরি) সহায়তা প্রকল্পটি ২০১৯ সালের শুরুর পর একভাগ অগ্রগতিও হয়নি।
রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশনে জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধিও কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ২০১৯ সালের শুরুর পর ২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। অথচ চলতি এপ্রিল পর্যন্ত একভাগও অগ্রগতি নেই।
রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৪ ভাগ। সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত। ২০০টি মিটারগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের একভাগ অগ্রগতি না থাকলেও সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দীন।
৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুন মাসে নেওয়া হয়। প্রায় ১৩ বছরে প্রকল্পের একভাগও অগ্রগতি নেই। অথচ প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ অবস্থায় প্রকল্পটির আরও অন্তত তিন বছর সময় বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৫ ভাগ। প্রকল্প কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানিয়েছেন, মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শেষ না হওয়ায় গত ৩০ জুন আরেক দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রগতি হয়েছে ৬০ ভাগ। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ শেষ করতে আরও এক বছর সময় বাড়ছে।
ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৭১ ভাগ। গত ৩০ জুন মেয়াদ শেষে আরও এক বছর প্রকল্পের সময় বাড়নো হয়েছে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পটি ২০১১ সালের ১ জুন শুরু হয়ে ২০১৯ সালে ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ গত এক যুগ শেষে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৫ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা সুলতান আলী। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের ৩০ জুন দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৭৭ ভাগ। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ৯৭ ভাগ। গোবরা থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং বাগেরহাটে রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ ডিজাইন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের আরও তিন বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি ২০ ভাগ। রেলওয়ের ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের এক জুলাই, শেষ হওয়ার কথা ২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি শূন্য ভাগ। প্রকল্পটি বাতিলের চিন্তা করছে রেলওয়ে। রাজবাড়িতে একটি নতুন ক্যারেজ মেরামত কারখানা নির্মাণের জন্য বিশদ নকশা ও দরপত্র দলিল তৈরিসহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত এক ভাগও কাজ হয়নি।
রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬০ ভাগ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পটি ২০২১ সালের এক নভেম্বর শুরু হয়ে ৩০ এপ্রিল ২০২৪ শেষ হওয়ার কথা। আড়াই বছর শেষে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র চার ভাগ। রেলওয়ের জন্য ২০০ ব্রডগেজ (বিজি) পেসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্প গত বছরের এক জুলাই শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত হলেও চলতি এপ্রিল পর্যন্ত একভাগ অগ্রগতি হয়নি। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে চলতি ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। এপ্রিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ ভাগ।
মন্তব্য করুন