খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল সোমবার ভোট গ্রহণ। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিএনপি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পড়তে হতে পারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানার দাবি ভিন্ন। তিনি বলছেন, নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ নয়। আমাদের প্রত্যাশা, ভোটকেন্দ্রে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোটার হাজির হবেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল রাত ১২টায় প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) মেশিনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সেই নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন, ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ৭০ হাজার। ৫ লাখ ৯৩ হাজার ভোটারের মধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। এবার ৪২ হাজার ৪২৯ নতুন ভোটারসহ মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২২-এ। বিএনপির দলীয় নির্দেশ নেতাকর্মী সমর্থকরা মানলে ভোটারদের একটা বড় অংশ ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হবেন। তারা ভোট দিতে আসবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রে সন্তোষজনক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে ক্ষমতাসীন দলটির।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি কেসিসির সদ্য বিদায়ী মেয়র। এর আগেও তিনি খুলনা সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন দুবার। এবার দল তাকে তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন দিয়েছে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে কেসিসির কাউন্সিলর, জাতীয় সংসদের সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মানুষের ভালোবাসায় রয়েছেন দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততার কারণে। ১২ জুন বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করে নগরবাসী তার প্রমাণ রাখবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওই ওয়ার্ডগুলোর আওতায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এবার নির্বাচনে ১৬১ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ও ১২৮ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেএমপি।
খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা সাংবাদিকদের বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার এবং সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৭১টি মোবাইল প্যাট্রোল টিম, ২০টি অতিরিক্ত মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতিটি থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্স থাকবে। নির্বাচনের কাজে মোট ৪ হাজার ৮২০ পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৬৭ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন।
২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা: ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সব ভোটকেন্দ্র।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক। তাদের কেউই শক্ত প্রার্থী নন। খালেকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বাকি চার মেয়র প্রার্থীর।
মন্তব্য করুন