চার মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেলকে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকার অবৈধ ভ্যাট সুবিধা দিয়েছিলেন আদায়কারী সংস্থা ভ্যাট এলটিইউর (বৃহৎ করদাতা ইউনিট) তৎকালীন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর। নির্ধারিত সময়ে ভ্যাটের দায় শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিগুলোর ওপর ১৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকার সুদ প্রযোজ্য হয়েছিল। সেটি আদায় না করে কোম্পানিগুলোকে ভ্যাট মাফ করে দেন তিনি। এনবিআরের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভ্যাট আইনে তা মাফযোগ্য নয়। এ কারণে ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তার বিরুদ্ধে হচ্ছে বিভাগীয় মামলা। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি কপি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ভ্যাটের ১৫২ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা মওকুফ করেন এলটিইউ ভ্যাটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী। আর সুদ মওকুফের বিষয়টি এনবিআরের নজরে আসার পর বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে ভ্যাট মওকুফ করা আইনসিদ্ধ হয়নি বল মতামত দেয়। কমিটির মতামতের বিষয়টি আমলে নিয়ে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার আদেশ দিয়েছেন এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ফারজানা আফরোজ।
জানতে চাইলে এলটিইউ ভ্যাটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তার বক্তব্য জানা যায়নি। পরবর্তী সময়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এনবিআর সূত্র জানায়, ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী ১৬টি নথির বিপরীতে সুদ আদায় না করে একক সিদ্ধান্তে মওকুফ করে দিয়েছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাস্তবায়ন থেকে অনুরোধ জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর। তবে পিআরএলে থাকার কারণে আইনিভাবে তার বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় মামলা করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুদ আদায়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এর আগে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কিছু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সুদ আদায়ের বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। কিন্তু চার মোবাইল অপারেটরের মামলার সিদ্ধান্তে সুদের বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না। আর এক্ষেত্রে সুদ প্রযোজ্য হবে কি হবে না, সেটাও আইনের মৌলিক কাঠামোর ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিষয়। তাই সুদ প্রযোজ্য হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত দেওয়াও এলটিইউর তৎকালীন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বিচক্ষণতার পরিচয় দেননি। ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর একক নির্বাহী সিদ্ধান্তের সুদ মওকুফ করেছেন, যা আইনসিদ্ধ ছিল না।