পুণ্ড্রনগরখ্যাত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু প্রাচীন নিদর্শন। তেমনি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো খোদার পাথর ভিটা। স্থানীয়রা এটাকে দুধপাথর বলে থাকেন। মহাস্থানগড়ের ভেতরে শাহ সুলতান বলখী (র.) মাজারের উত্তর-পশ্চিম দিকে এটি রয়েছে। মূলত খোদার পাথর ভিটা একটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এখানে রয়েছে একটি লম্বা পাথর।
সরেজমিন দেখা যায়, পুণ্ড্রনগরে অবস্থিত একটি টিলা বা ঢিবির ওপরিভাগে রয়েছে লম্বা একটি গ্রানাইট পাথর। এতে রয়েছে দরজার হুড়কো লাগানোর দুটি ছিদ্র, ওপরের দিকে ফোকর এবং ফুলের নকশা। ধারণা করা হয়, পাথরটিতে খোদাই করা নকশা থাকার কারণে একে ‘খোদাই পাথর’ বলা হতো, যা কালক্রমে ‘খোদার পাথর’ নাম ধারণ করছে।
জানা গেছে, এই টিবির ধ্বংসাবশেষ পাল শাসনামলের প্রথমদিকের। ১৯৭০ সালে এখানে খনন করা হয়। তখন একটি মন্দির ও কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
পাওয়া যায়। পূর্বমুখী আয়তাকার বৌদ্ধ মন্দিরটিতে রয়েছে পাথর দিয়ে বাঁধানো মেঝে এবং ভিত-দেয়াল। ভিতের ওপর স্থাপিত দেয়াল ছিল কাদামাটি দিয়ে
গাঁথা ইটের তৈরি। দরজার চৌকাঠের বাজু এবং ওপরের দিকের অলংকৃত অংশ পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এটি দীর্ঘাকার এবং চৌকোনকৃতির মসৃণ পাথর,Ñযা সাধারণত প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। লোকমুখে প্রচলিত, রাজা পরশুরাম পাথরটি সংগ্রহ করে এটিকে মসৃণ করে বলি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতেন।
তবে সনাতন ধর্মের অনেকে পাথরটিকে ব্রহ্মার বাহন বলে থাকেন। কেন এমনটি বলেন, তার কোনো কারণ জানা যায়নি। পাথরের ওপরে একটি প্রাচীন বটগাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের তলায় মাঝেমধ্যে বাউল-সন্ন্যাসীদের আড্ডা বসে।
প্রতিদিন বহু মানুষ মহাস্থানগড়ে আসেন। তারা এই খোদার পাথর ভিটা দর্শন করেন। তেমনি একজন হলেন নন্দীগ্রামের পৌর এলাকার সনাতন ধর্মাবলবম্বী নীলকান্ত সাহা। তিনি এই পাথরে দুধ ঢালার মানত করেছেন। সনাতন ধর্মের অনেক নারীকে পাথরে সিঁদুর লাগাতে দেখা গেছে।
প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, খোদার পাথর ভিটা একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানে খনন কাজ করে মন্দিরের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি অষ্টম শতকে (পাল আমলে) নির্মিত বৌদ্ধ মন্দির। সেখানেই এ পাথরটি পাওয়া গেছে।