রাজধানীর হাজারীবাগের ব্যবসায়ী মো. এখলাস হত্যার নেপথ্যে ছিল কামরাঙ্গীরচরে সিএস ২২ দাগে ৪০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা। এখলাসের মালিকানাধীন ওই জমিসহ পাশাপাশি আরও জমি ছিল। যাতে চোখ পড়েছিল হাজারীবাগ এলাকার ট্যানারি মাফিয়া মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির ওরফে লেদার মনিরের। এরপরই এখলাসকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করেন তিনি। সে অনুযায়ী তাকে খুন করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড মনির হোসেনসহ তার আরও চার সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও বেনাপোলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন আ. রহমান ওরফে রহমান কাল্লু, মো.
এসহাক, ফয়সাল ও ঝন্টু মোল্লা। তাদের মধ্যে ঝন্টু মনিরের ক্যাশিয়ার এবং অন্য তিনজন ভাড়াটে খুনি। গতকাল শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গত ৩০ জুন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের কোম্পানিঘাট এলাকায় বস্তাবন্দি অবস্থায় এখলাসের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি চামড়ার ব্যবসার পাশাপাশি জমির ব্যবসা করতেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এখলাসকে খুনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার আগের রাত। সেই রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ওই ব্যবসায়ী। এর দুই দিনের মাথায় কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখলাস খুনের পর এ ঘটনায় ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা হয়। এরপর থেকেই থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে নিজের
সম্পৃক্ততা এড়াতে মনির জঙ্গিদের মতো ‘কাটআউট’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ২০ জুলাই ঢাকায় বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার করা হয় তার ক্যাশিয়ার ঝন্টু মোল্লাকে। তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিলে বিস্তারিত তথ্য মেলে। এরপর এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এখলাস হত্যায় সরাসরি জড়িত রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী এসহাককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ডিবির অন্য দুটি টিম মাগুরা এবং বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী মনিরকে গ্রেপ্তার করে। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, হাজারীবাগ ও সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমিদস্যু এবং জমির বড় দালাল। বিভিন্ন সময়ে তিনি ভিকটিম এখলাসকে দিয়ে জায়গা দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করিয়েছেন। কামরাঙ্গীরচর থানাধীন সিএস ২২ দাগের একটি বড় জমিতে নিহত এখলাসের ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার অধিগ্রহণ মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। কোম্পানি মনির এই জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে সব টাকা গ্রাস করতে চেষ্টা চালান। এই চেষ্টা রোধ করতে ভিকটিম এখলাস একাধিক মামলা দায়েরসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকানার কথা জানিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এরপরই কোম্পানি মনির এখলাসকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এখলাসকে খুনের পরিকল্পনা করে কোম্পানি মনির ওমরাহ পালনে চলে যান। সেখান থেকে ফিরে কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০ লাখ টাকার চুক্তিকে খুনি ভাড়া করেন। এরপর নিজে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে এখলাসের মাধ্যমেই ব্যবসার টাকা জানিয়ে খুনিদের টাকা পৌঁছে দেয় মনির। খুন করার সময়ে চলে যান হজ পালনের জন্য। দেশে ফিরে ডিবির তদন্তের বিষয়ে টের পেয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়ে কলকাতা পালিয়ে যান। সেখান থেকে অবৈধ পথে বেনাপোল হয়ে গোপনে দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান জানান, গ্রেপ্তার কোম্পানি মনিরসহ তার অন্য তিন সহযোগীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এরপর ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
মন্তব্য করুন