আবুল হাসান, গাজীপুর
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ এএম
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শ্রীপুরে চিঠি যেতে সময় লেগেছে ১০ মাস

ডাক বিভাগের উদাসীনতা
শ্রীপুরে চিঠি যেতে সময় লেগেছে ১০ মাস

নিজের অনুভূতি প্রকাশ, খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি দাপ্তরিক প্রয়োজনে দুই দশক আগেও একক আধিপত্য ছিল চিঠির। আর এই চিঠি আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম ছিল দেশের ডাক বিভাগ। সারা দেশের মতো গাজীপুর শহর ও অলিগলিতে স্থাপিত পোস্ট অফিসগুলোয় দেখা যেত, রানার ও পোস্টম্যানদের ব্যস্ততা। সাইকেলে চড়ে প্রিয়জনের খবর নিয়ে আসতেন পোস্টম্যান। দূর প্রবাসে থাকা প্রিয়জনের এক টুকরো লেখা চিঠি যেন প্রশান্তি নিয়ে আসত স্বজনের মন-মননে; কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও নানা অব্যবস্থাপনায় অনেক মানুষ এখন আর পোস্ট অফিসে যান না। সেবা নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

গাজীপুর শহরের প্রধান ডাকঘরে দেখা গেছে, আগে যেখানে পোস্ট বক্স রাখা ছিল, সেটি আর সেখানে নেই। কারণ সেখানে এখন আর কেউ চিঠি ফেলেন না। ব্যস্ততা নেই তিনতলাবিশিষ্ট নতুন এই ডাকঘরের। কয়েকজন কর্মী কাজ করছেন আপন মনে। শুধু দাপ্তরিক চিঠিপত্র আর নগদের সেবা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে দেখা গেছে। শুধু প্রধান ডাকঘর নয়, ভূতুরে পরিবেশ দেখা য়ায় চান্দনা চৌরাস্তা, কড্ডাসহ আশপাশের এলাকার পোস্ট অফিসগুলোয়; কিন্তু দুই দশক আগেও রমরমা অবস্থায় ছিল এখানকার পোস্ট অফিস। মানুষের আবেগ, ভালোবাসাসহ নানা প্রয়োজনের মিলবন্ধন ছিল এই পোস্ট অফিসগুলো। সাইকেলের টুং টাং শব্দে পোস্টম্যানের অপেক্ষায় থাকতেন অনেকেই।

চিঠি নিয়ে আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন নজরুল ইসলাম নামে এক সমাজসেবক। হাতের লেখা চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের যুবক বয়সে প্রেম, ভালোবাসার প্রকাশ আমরা চিঠি দিয়ে জানাতাম। সেই হাতের লেখা চিঠির ব্যাকুলতা এখন বোঝানো সম্ভব না। প্রিয়জনের ভালোবাসার গন্ধ যেন লেগে থাকত চিঠিতে; কিন্তু এই প্রজন্ম ভুলে গেছে চিঠি লেখা। কারণ তাদের হাতে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের কল্যাণে নিমিষেই যোগাযোগ হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে। সহজলভ্য যোগাযোগ হলেও সেই আগের আবেগ এখানে দেখা মিলে না।

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে গাজীপুর প্রধান ডাকঘরে পোস্টম্যানের কাজ করছেন আবুল হোসেন। নিজ চোখে দেখেছেন এখানকার উত্থান, পতন। তিনি বলেন, আগে অনেক চিঠি আসত। এগুলো বস্তায় ভরে বিলি করতাম; কিন্তু এখন ব্যক্তিগত চিঠি কম, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও দাপ্তরিক চিঠি বেশি। আগে এখানে ৫ জন কাজ করতাম, এখন তিনজন আছি। তাই কাজের চাপ বেশি। আমরা যে বেতন পাই, তা খুব সামান্য। টেনে টুনে সংসার চালাতে হয়। এই বেতন দিয়ে আসলে আমাদের চলে না। চিঠি নিয়ে আবেগ আর নানা ঘটনার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা থাকলেও ডাক বিভাগের উদাসীনতায় ভোগান্তির মাত্রাও কম নয়।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের স্থানীয় সংবাদকর্মী আল আমিন। জমির সার্টিফায়েড পর্চার জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর গত বছরের অক্টোবরে আবেদন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যথাসময়ে সার্টিফায়েড পর্চা সরবরাহ করার পরপরই ডাক বিভাগ বরাবর রেজিস্ট্রেশন করে প্রাপক আল আমিনের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেয়; কিন্তু আল আমিন সেই চিঠি পান ১০মাস পর।

ভুক্তভোগী আল আমিন বলেন, জমির সার্টিফায়েড পর্চার জন্য অনেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে চাহিদা অনুযায়ী সার্টিফায়েড পর্চার জন্য আবেদন করি গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, যথাসময়ে ডাকযোগে রেজিস্ট্রেশন করে কাগজপত্র পাঠানো হবে। এরপর থেকে শুরু অপেক্ষার পালা; কিন্তু কোনোভাবেই পর্চার কোনো হদিস পাইনি। পোস্ট অফিসে খোঁজ-খবর নিতে থাকি। জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, কাগজপত্র রেজিস্ট্রেশন করে পাঠানো হয়েছে। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কাগজপত্র না পেয়ে হাল ছেড়ে দেই। পরবর্তীতে ১০ মাস পর হঠাৎ করে ফোন করেন পোস্ট মাস্টার। তিনি জানান, আপনার চিঠি আছে।

এরপর ডাক পিয়ন আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে রিসিভ করে দেখি চিঠিতে তারিখ লেখা ১৫ ডিসেম্বর ২০২২। ডাক বিভাগের অবহেলায় আমার চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ২৩ কিলোমিটার দূরত্বের চিঠি পোঁছাতে সময় লাগল ১০ মাস। এটা রীতিমতো আশ্চর্য হওয়ায় মতো বিষয়—যোগ করেন তিনি।

শুধু আল আমিন নন, ডাক বিভাগের সেবার মান নিয়ে এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকের। ফলে গাজীপুরের বেশিরভাগ মানুষ ডাক বিভাগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিসের গাজীপুর শাখার কর্মকর্তা ফিরোজ বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস ডিজিটালাইজড হওয়ায় আমাদের গ্রাহক বেড়েছে। আমরা সব সময় গ্রাহককে ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

গাজীপুরের প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার খায়রুল আলম বলেন, গাজীপুরের ৩ উপজেলায় তিনটি উপজেলা পোস্ট অফিস, ১৬টি সাব-পোস্ট অফিস এবং ১১০টি শাখা পোস্ট অফিস রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান ছাড়াও ডাক টিকিট, প্রাইজবন্ড বিক্রি করা হয়। ভেন্ডাররোল, পার্সেল, মানি অর্ডার, ই-মানি অর্ডার করা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র জমার নির্দেশ চবি প্রশাসনের

চবিতে সংঘর্ষ : ১ হাজার ৯৫ জনকে আসামি করে মামলা

নুরের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রাণঘাতী বন্যাকে ‘আশীর্বাদ’ বললেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পতিত আ.লীগ ভারত থেকে গুজব ছড়াচ্ছে : মির্জা ফখরুল

রাজধানীতে মসজিদের আগুন নিয়ন্ত্রণে

স্ত্রী-সন্তানের পর চলে গেলেন সোহেলও

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা বহিষ্কার

শুল্ক টানাপোড়েনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা শুরু

১০

এবারই ব্যালন ডি’অর জেতার স্বপ্ন দেখছেন ইয়ামাল

১১

সম্পর্ক মধুর রাখতে বিশেষজ্ঞদের ৭ সহজ পরামর্শ

১২

গ্রাম আদালতে সহজ ও কম খরচে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে : ডিসি সারোয়ার

১৩

ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ছাত্র-শিক্ষক আহত

১৪

বুয়েট শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

রাজধানীতে একটি মসজিদে আগুন

১৬

রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের নতুন রেকর্ড

১৭

গবেষণা / মুখের যত্নে বাড়ে মস্তিষ্কের শক্তি 

১৮

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

১৯

শিবির নিয়ে উমামার ফেসবুক পোস্ট

২০
X