শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিধ্বস্ত গাজা পুনরুদ্ধারে ইসরায়েলের বাধা

মাহমুদ আল-রানতিসি
বিধ্বস্ত গাজা পুনরুদ্ধারে ইসরায়েলের বাধা

গাজায় ১৫ মাসের ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর ফিলিস্তিনি আলোচকরা যারা দখলদারদের পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন—নির্বিচারে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একটি মানবিক প্রটোকল অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে জোর দেন। এ প্রটোকলে গাজায় প্রতিদিন ৬০০টি মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ, ২ লাখ তাঁবু, ৬০ হাজার ক্যারাভান, ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও মৃতদেহ উদ্ধার করতে ভারী যন্ত্রপাতির প্রবেশ, প্রতিদিন অন্তত ১৫০ জন আহত ব্যক্তিকে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য বের হওয়ার অনুমতি এবং হাসপাতাল ও বেকারি চালানোর জন্য প্রতিদিন অন্তত ৫০টি তেলবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়েছে, তবু ইসরায়েল মাত্র ৪ শতাংশ প্রয়োজনীয় তাঁবু প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে এবং কোনো ক্যারাভানই প্রবেশ করতে দেয়নি। একই সঙ্গে তারা এখনো ধ্বংসস্তূপ অপসারণে প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতির প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে। গাজায় আনুমানিক ১৪ হাজার নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছে, যাদের অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী প্রবেশের অনুমতি পাওয়া তেলবাহী ট্রাকের মাত্র ৫ শতাংশ গাজায় ঢুকতে পেরেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ৩০টিরও বেশি হাসপাতাল পুনর্গঠনের কোনো অনুমতি এখনো মেলেনি। এ ছাড়া আটটি তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সুবিধা মিশরীয় শহর আরিশে সংরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, কারণ ইসরায়েল সেগুলোর প্রবেশ অনুমোদন দেয়নি। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিদিন ১৫০ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য বের হতে দেওয়ার কথা থাকলেও, ইসরায়েল প্রতিদিন মাত্র ৪৪ জনকে অনুমতি দিয়েছে। এমনকি কিছু আহত ব্যক্তি রাফাহ সীমান্তে অপেক্ষারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।

এটা স্পষ্ট যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে এবং দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে চায়, যাতে তারা মানবিক সংকটকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে যুদ্ধাপরাধের শামিল। দুই মিলিয়ন গাজাবাসী এখনো গণহত্যা ও ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া ভোগ করছে। তাদের জন্য আশ্রয় নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আঞ্চলিক দেশগুলোর উচিত ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা মানবিক সহায়তার প্রবেশে বাধা না দেয় এবং এই ইস্যুকে ইসরায়েলি সরকারের বর্ণবাদী লক্ষ্য থেকে দূরে রাখা যায়।

আঞ্চলিক শক্তিগুলোর—বিশেষ করে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর এখানে বড় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। যদিও তারা অনেক সহায়তা পাঠিয়েছে, তার কিছু অংশ গাজায় প্রবেশ করলেও বেশিরভাগই আটকে রয়েছে। এজন্য এসব দেশের উচিত ইসরায়েলের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা, যাতে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায় এবং পরবর্তী আলোচনার পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

ফিলিস্তিনিদের মানবিক অধিকার হরণ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত আশ্রয়সামগ্রী প্রবেশে বাধা দেওয়া গাজার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। এটি মূলত চরমপন্থি ইসরায়েলি ডানপন্থিদের পরিকল্পনার অংশ, যা গাজার জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পথ প্রশস্ত করতে পারে। এ বাস্তবতা মধ্যস্থতাকারীদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তাদের উচিত ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করা। একই সঙ্গে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় একসঙ্গে চাপ প্রয়োগ করা, যাতে ইসরায়েল এ বর্ণবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে।

১৫ মাস ধরে পরিকল্পিতভাবে গাজার জনগণকে দুর্বল করার জন্য ইসরায়েল একাধিক কৌশল প্রয়োগ করেছে। জীবনের মৌলিক উপাদানের অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রবেশও নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে, ৩৪টি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এবং অবশিষ্ট হাসপাতালগুলো চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি প্রবেশে বাধা দিয়েছে। গাজায় ৯২৭টি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ফলে ৭০ ভাগ শিক্ষা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই খাতের ক্ষতির পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এ ছাড়া ইসরায়েল ৯৪ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং শত শত স্কুলশিক্ষককে হত্যা করেছে। গাজায় বাণিজ্য, শিল্প এবং আর্থিক লেনদেন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ প্রবেশে ইসরায়েল নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা স্থানীয় বাজার ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে মসজিদ, গির্জা, পৌরসভা ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এমনকি তারা গাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ১৯৫৮ সালে নির্মিত ফিলিস্তিনি পার্লামেন্ট ভবনও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল কৌশলগতভাবে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল ধ্বংস করেছে, যাতে সেগুলো বাসযোগ্য না থাকে এবং জনগণ বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

ইসরায়েল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও গাজার জনগণের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তবে বাস্তবতা বলছে, জীবনযাত্রার প্রতিটি দিক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংহতির জাল বিস্তার করতে হবে এবং মৌলিক সেবাগুলোর প্রবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা জরুরি।

আলজাজিরা আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন

হাসিবুর রহমান

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিপির সমাবেশ নিয়ে নাহিদের বার্তা

শ্বশুরবাড়ি থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর এপিএস গ্রেপ্তার

ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনে বাণিজ্যে ধাক্কা

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির সমাবেশ আজ

জুমার দিন দোয়া কবুলের উত্তম সময় কখন 

নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি

গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ

আবারও বড় ধাক্কা খেল যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি / ইরানের তেল কিনলেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ

১০

নতুন করে বিমান হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র, অপ্রতিরোধ্য ইয়েমেন

১১

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

১২

ঢাকার আবহাওয়া আজ কেমন থাকবে

১৩

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৪

ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর

১৫

০২ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজকে অব্যাহতি

১৭

০২ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

ডয়চে ভেলের সংবাদ নিয়ে জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের প্রতিবাদ

১৯

‘গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানূষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বিএনপি কাজ করবে’

২০
X