কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০২:২০ এএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আবদুল মুক্‌তাদিরের নিবন্ধ

মার্চের কথা

আবদুল মুক্‌তাদির
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মার্চের গোড়ায় একদিন শুনলাম যে, চার ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী আর শাহজাহান সিরাজ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবে আর পতাকা ওড়াবে। আমি হাইকোর্টের পাশ দিয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে যাচ্ছি হেঁটে হেঁটে, হাইকোর্টের ওখানে দেখি, পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ নামিয়েছে একজন, আর লোকজন সেটা পোড়াতে নিচ্ছে। আমি একজনকে বললাম যে, নামিয়ে সরিয়ে ফেল, কিন্তু পোড়াতে পারবে না, কারণ আমার ফ্ল্যাগও যদি আরেকজন পোড়ায় তো আমার কেমন লাগবে। ওরা বলল, না, ঠিকই করছি, এইটা কোনো ফ্ল্যাগই না। আমরা তো আলাদাই হয়ে যাব, তো এইটা আবার ফ্ল্যাগ কী! আমি ইউনিভার্সিটি চলে গেলাম। আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে গাড়িবারান্দার ওখানে সিঁড়িতে বসে ছাত্রনেতারা বক্তৃতা দিচ্ছিল...

খানিকক্ষণ বসলাম। তারপর মনে হলো, যে রকম কথাবার্তা বলছে, সামনাসামনি থাকলে পরে বেরোনো কঠিন হবে। আমি বাইরে চলে এসে রেলিংয়ের বাইরে রাস্তা থেকে দেখছি।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকেই মনে হচ্ছিল, এখন ধাপে ধাপে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাবে, এসপার-ওসপার। কীভাবে হবে, এটা তো বোঝা যাচ্ছিল না। আন্দোলন-মিটিং-মিছিল যা-ই হতো, পেছন পেছন থাকতাম।

মার্চের গোড়ায় একদিন শুনলাম যে, চার ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী আর শাহজাহান সিরাজ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবে আর পতাকা ওড়াবে। আমি হাইকোর্টের পাশ দিয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে যাচ্ছি হেঁটে হেঁটে, হাইকোর্টের ওখানে দেখি, পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ নামিয়েছে একজন, আর লোকজন সেটা পোড়াতে নিচ্ছে। আমি একজনকে বললাম যে, নামিয়ে সরিয়ে ফেল, কিন্তু পোড়াতে পারবে না, কারণ আমার ফ্ল্যাগও যদি আরেকজন পোড়ায় তো আমার কেমন লাগবে। ওরা বলল, না, ঠিকই করছি, এইটা কোনো ফ্ল্যাগই না। আমরা তো আলাদাই হয়ে যাব, তো এইটা আবার ফ্ল্যাগ কী! আমি ইউনিভার্সিটি চলে গেলাম। আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে গাড়িবারান্দার ওখানে সিঁড়িতে বসে ছাত্রনেতারা বক্তৃতা দিচ্ছিল। খানিকক্ষণ বসলাম। তারপর মনে হলো, যে রকম কথাবার্তা বলছে, সামনাসামনি থাকলে পরে বেরোনো কঠিন হবে। আমি বাইরে চলে এসে রেলিংয়ের বাইরে রাস্তা থেকে দেখছি।

৭ মার্চের বক্তৃতা শুনতে গেলাম কামরুল ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। আমার ছোট একটা টেপরেকর্ডার ছিল, অত ভালো রেকর্ড হতো না। মাইকের কাছাকাছি বসে শেখ সাহেবের ভাষণ রেকর্ড করলাম। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আবার আরেকজনের টেপরেকর্ডার নিয়ে সাত-আটটা কপি করে অনেকের বাড়িতে দিয়ে বলেছি, তোমরা কপি করে যাকে যাকে পারো বিলাও। না হলে অনেকে এটা জানতে পারবে না। পরদিন দেখলাম, ভাষণটা রেডিওতেও দিল, আনএডিটেড।

মার্চ মাসের প্রথম থেকেই শেখ সাহেবের ডাকে অফিস-আদালতে কাজ বন্ধ হলো। সামনে ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবস, অনেকে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করছে—পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ ওড়াবে না।

আমার এক বন্ধু ছিল জাহেদ ইকবাল। ওর ছোট একটা প্রেস ছিল, সেখান থেকে ও কাগজের পতাকা বানিয়ে সব জায়গায় দিয়েছিল। জাহেদের কিছু আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব জাতীয় পরিষদের সদস্য, ঢাকায় এসেছিল আলোচনায়। বোধ হয় ২২ বা ২৩ হবে, ওরা ওকে বলেছে যে টকফক সব ভাঁওতা, এটা সময় নেওয়া হচ্ছে, তোমাদের ওপরে কিন্তু স্টিমরোলার চলবে। তোমরা সব সাবধান হয়ে যাও। জাহেদ এসে আমাকে খবরটা দিল বোধ হয় ২৪-এ। ও আমাকে বলল, ঘরে এক মাসের খাবারদাবার জোগাড় করে রাখতে, বাচ্চা আছে।

ওদিকে বিটপীতে কিন্তু অনেক কাজ জমা হয়ে আছে, ২৬-এ লোক আসবে নিতে। জাহেদের ওই কথার ওপরে ২৫ মার্চে আমি রেজা আলীকে গিয়ে বললাম, আজকে পাঁচটার পরে কেউ থাকবে না, সাড়ে চারটায়

অফিস বন্ধ করে দেব। বললাম, কিছু কিছু টাকা এদের দিয়ে দেন, বাজার করে নেবে। রেজা আলী বলছে, কার কথায় কী কান দিচ্ছেন, কিচ্ছু হবে না, এটার একটা পলিটিক্যাল সলিউশান হবে। তখন বললাম যে, আমি আসার সময়েই স্টেট ব্যাংকের সামনে, চিফ সেক্রেটারির বাসার সামনে নানা জায়গায় দেখে এসেছি যে, কামুফ্লাজ করে করে ফিল্ড গান, ছোট ছোট ট্যাঙ্ক রাখছে। তো বিকেলে আমি শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে রিকশায় তুলে দিয়ে তারপর মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলাম। তোমার মাকে বলে দিয়েছিলাম রান্না কোরো না, বাজার করতে পারি নাই, কাবাব-পরোটা নিয়ে আসব, কিনলাম রেক্স থেকে।

বাসায় ফেরার পথে থামলাম, একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল দ্য পিপল, তার অফিসে। ‘গ্রিন হোটেল’ ছিল পরীবাগে, এখন যেখানে মোটর গ্যারাজট্যারাজ হয়েছে, তার কাছে অফিসটা। দ্য পিপল-এ আমাদের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় কাজ করত। পত্রিকাটায় খবর বের হতো যে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কী প্রস্তুতি চলছে। ওরা খবরটা পেত ক্যান্টনমেন্টে খাবার ইত্যাদির জোগানদার এক কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে। সাপ্লাইয়ের ভলিউম অনেক বেড়েছিল, এ ছাড়া সে ওখানকার কর্মকাণ্ড যা দেখত এসে এসে বলত। সত্যতা নিয়ে আমার অবশ্য কিছু সন্দেহ ছিল যে এগুলো ফিড করা কি না। আবার মনে হয় যে, নাও হতে পারে। ততদিনে অনেককে ধরে নিয়ে গেছে, মেরেছে, এসব ছাপত। ওরা নিজেদের সোর্স বাঙালি অফিসারদের কাছ থেকে যা খবর পেত সেসবও অনেক ছাপত। আমি আমার আত্মীয়কে সাবধান করে বললাম, অফিস বন্ধ করে দিতে, বললাম সেদিন যে খবর ছাপিয়েছে, কিছু হোক না হোক, ওদেরকে রেহাই দেবে না। তো সে বলল যে, না, না, কিছু হবে না।

ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি বাসায় যাচ্ছি, হাতিরপুলের ওখানে এসে দেখি জটলা। কামরুল ভাই আছেন, জাতীয় পরিষদ সদস্য কালু চৌধুরী আছেন, আরও সব পাড়ার মাতব্বররা আছে। আমি বাসায় কাবাব-পরোটা রেখে ফিরে গেলাম। ওদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরছি, পথে ধরল অরুণদা (আত্মীয়, গাজী আবদুল মোমেন), কিছু ভালো লাগছে না, আসো তাস খেলি। আমি বললাম যে না, খেলব না। আরও কে কে ছিল, ওরা খেলতে বসল। এই রকম সময়ে কালু মামা ঢুকে বলেন যে, তোমরা তো মানুষ না, এই রকম একটা কাজ হয়ে যাচ্ছে আর তোমরা এখানে বসে তাস খেলছ! আজ রাত বারোটার সময়ে আর্মি নামবে। পারো তো সারা শহরে খবর পৌঁছায়ে দাও। এ রকম একটা সুনিশ্চিত কথা শুনে আমি লাফ দিয়ে বেরিয়ে হাতিরপুলের দিকটায় যারা যারা ছিল তাদের বললাম। দেখি গোলাম সারওয়ার যাচ্ছে। সে তখন ইত্তেফাক-এ পার্টটাইম কাজ করে, সন্ধ্যায় যায়, রাতে ফেরে। তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা কি আটটা হবে। ওকে নিষেধ করলাম যেতে, ও বলে যে না, আমি এখনি ইত্তেফাক-এ ফোন করেছি, ওরা বলেছে আমাদের কাছে খবর থাকত না তাহলে?

তারপর আমি ভাবলাম যে, ওয়ারীতে আম্মাজান, মালেকা, মুকুল, ওদের খবর নেব। মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম জাহেদের বাসায়, নিউ ইস্কাটনে। ওকে রাত বারোটার কথা বলতে বলল যে আমি তো ঠিকই জানতাম। ওর ওখানে মোটরসাইকেল রেখে ওর গাড়িতে দুজন চললাম ওয়ারী। পথে মনে হলো, মালেকা-মুকুল হলে থাকতে পারে, ইউনিভার্সিটি ঘুরে যাই। ইউনিভার্সিটি পাড়ায় দেখি একদম অন্ধকার, কোনো হলে বাতি নাই। কোনো একটা হলে যেন ছাত্রলীগের সেলিম, মন্টু, এরা ছাত্রনেতারা থাকত, ওখানে একটা রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ করা হয়েছিল। এদেরকে খবরটা দেব বলে যাচ্ছি, দেখি একটা জিপে সেলিম, জিপটা চালাচ্ছে আর কোলের ওপরে একটা স্টেনগান রাখা। জিপ থামিয়ে বলে আপনারা কারা, রাত বারোটার খবরটা বললাম। বলে তাই নাকি, মোকাবিলা হয়ে যাবে! জাহেদকে বললাম, আর্মির সঙ্গে মোকাবিলা করবে স্টেনগান দিয়ে, এরা পাগল, চল। রমনা থানার ওদিক দিয়ে যেতে পথে যত লোক পাচ্ছি ব্যারিকেড লাগাতে বলছি। অলরেডি কোনো কোনো জায়গায় লাগানো চলছিল। মগবাজারের ওখানে রাস্তার পাশে কনস্ট্রাকশনের ইট দিয়ে ব্যারিকেড দিচ্ছে, পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে নবাবপুরের দিকে ব্যারিকেড লাগানোর কথা বলে ওয়ারীতে ঢুকে দেখি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কার গ্যারাজ দখল করে বসে তাস খেলছে। পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হয়েছিল ৭ই মার্চের পরে। বকা দিয়ে জানালাম। সব পালিয়ে গেল। আম্মার বাসায় গিয়ে দেখি মুকুল ফেরেনি, অন্যরা ঠিক আছে। বললাম যে কাউকে বের হতে দেবেন না। ওদের বাজার আছে কি না খোঁজ করে বের হলাম।

বাসায় ফিরব, ময়মনসিংহ রোড দিয়ে আসতে দেখি আর্মার্ড কারে, জিপে, ফিল্ড গান, মেশিন গান ফিট করা। ক্যান্টনমেন্টের দিক থেকে ইউনিভার্সিটির দিকে যাচ্ছে। দূরে দেখেছি ট্যাঙ্ক। তখন রাত এগারোটা হবে। বাংলামটরের মোড়ে জাহেদের গাড়ির চাকা পাংচার হলো, পেছনেই ওর বাসা। গ্যারাজ থেকে মিস্ত্রিকে ডেকে চাকা সারাতে দিয়ে জাহেদ সবাইকে বলছে ব্যারিকেড লাগাও। রাস্তার একদিক দিয়ে মিলিটারি যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষজন ভাঙা গাড়ি এনে ব্যারিকেড লাগাচ্ছে। আমি বললাম যে, জাহেদ পাগলামি আর না, যেসব জিনিস নিয়ে নেমেছে, ব্যারিকেডে কী হবে, নিরীহ লোকগুলো মারা যাবে। এইভাবে তো এটার মোকাবিলা হবে না! তুমিও বাসায় যাও, আমিও যাই, মোটরসাইকেল থাকুক তোমার ওখানে।

আমি হেঁটে ফিরছি, রাস্তার ওই পাড় থেকে এক আর্মি কিন্তু আমাকে ধমকি দিচ্ছে। আমি তো হাত তুলে দাঁড়িয়ে গেলাম দেয়ালের সঙ্গে লেগে। হো হো করে হেসে চলে গেল। এদিকে, লোকজনের উৎসাহ কতটা বোঝানোর জন্য বলছি, পরীবাগের মোড়ে এসে দেখি যে শাবল দিয়ে রাস্তা কাটছে, যাতে মিলিটারি ঢুকতে না পারে। বললাম যে মাথা খারাপ নাকি। তোমরা তো দুজন লোক, মেরে ফেলবে তোমাদের, যাও। বলে যে কামরুল ভাই, কালু চৌধুরী পাঠিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব বলে ওদের যেতে বললাম।

তারপর হাতিরপুলে এসে দেখি, ওখানে পাড়ার লোক সবাই, যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তা দিয়ে পুল ভাঙার চেষ্টা করছে। কামরুল ভাই, কালু চৌধুরী ওখানেই। বললাম যে পুল কী ভাঙবেন, যেই জিনিস নিয়ে নেমেছে দেখে আসলাম, পুলে আসতে হবে না, দূর থেকেই মারতে পারবে। আমাদের লাঠিসোটা নিয়ে করার কিছু নেই, এদের বাড়ি যেতে বলেন। এই সময় প্রথম গুলির আওয়াজটা শুনলাম বাংলামটরের দিক থেকে শব্দে মনে হলো হয় একটা রাইফেলের নয় পিস্তলের। মুহূর্তের মধ্যে দেখি পুলের ওপর আমি একা দাঁড়িয়ে। জাহেদের জন্য দুশ্চিন্তা হলো, টেলিফোনও নাই যে খবর নেব। পুল থেকে নেমে বাজারটার ওখানে দেখি সেলিম, মুকুল, মফিদুল (ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী), ওখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে যে আমরা প্রতিরোধ করব, যদি আপনারা সঙ্গে থাকেন আমরাও আছি। আমাকে এসে বলল যে মলোটভ ককটেল বানাব, পেট্রোল বোতল এসব লাগবে। আমাদের পাড়ায় থাকতেন ডাক্তার এ বি এফ এম করিম, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। জানতাম যে, উনি পেট্রোল জমা করে রেখেছেন। বড় একটা দুধের কৌটা নিয়ে গিয়ে বললাম, ডাক্তারদা, আমার মোটরসাইকেল আটকে গেছে, পেট্রোল লাগবে। বলেন, মোটরসাইকেল আটকেছে না কিছু বানাবে? আমি অস্বীকার করলাম। পেট্রোল নিয়ে দিয়ে ওদের বললাম, নসরের মুদিদোকান থেকে কেরোসিন নিতে। নসর দৌড়ে এসেছে যে আমার জিনিস! বললাম, পয়সা আমি দেব। তারপরে স্পিরিটের খালি বোতল জোগাড় করে দিলাম। বললাম বানাও, তারপর হাতের কাছে রেখে আমার বাসায় চলো, খাওয়া-দাওয়া করো, এগুলো দিয়ে কিছু হবে না। খামোখা এই লোকগুলোর বিপদ হবে। বলে না, না, আপনি যান। অনেক মিটিং আছে। ওরা ছিল একটা টিনের বাড়িতে, ওদেরই কারুর বাসা। সেখানে একটা টেলিফোন ছিল।

এই সময় গোলাগুলির আওয়াজ শুরু হয়েছে। রেললাইনের ধারে বস্তি, বললাম যে, ভেতর দিয়ে দিয়ে দেয়াল টপকে গিয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে দেখে আসব একতরফা না দুই তরফা। কামরুল ভাই বলেন, আমিও যাব, তুমি পারলে আমিও পারব। উনার পায়ে ছিল স্যান্ডেল, বলে যে, কেডস পরে আসি। উনার গেটের কাছে খালি গেছি, একটা বিকট এক্সপ্লোশান, গোলার আওয়াজ, বাড়িটাড়ি, গেট কেঁপে উঠেছে। বললাম, আর যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমাদের কিছু আপাতত করার নেই। আপনি বাসায় থাকেন। উনি প্রেসক্লাবে ফোন করেছেন, অনেকক্ষণ পরে একজন ধরে বলেছে বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে, মতিঝিলের দিক থেকেও গোলাগুলির শব্দ শুনছি। তখন রাত তিনটা হবে। কে একজন বলল, পুকুরপাড়ে গেছিলাম, দিলাপা বলছে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে। কামরুল ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে দেখি, হাতিরপুলের বাজারটা ফাঁকা হয়েছে, কিন্তু বাড়িগুলোর দোতলা-তিনতলার বারান্দায়-ছাদে ছেলেরা বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আর ঘুপচি-ঘুপচি দোকানগুলোর পেছনে লাঠি নিয়ে নিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, যে খালি একবার আসলে হয় আর ফেরত যেতে দেব না। আমি দাঁড়িয়ে থেকে এদের বাড়ি পাঠালাম। ছেলেদের বললাম, এটা কোরো না, আমি দেখে এসেছি কী কী জিনিস নিয়ে নেমেছে। দেখলে তোমরাও বুঝতে যে, এখন কিছু করার নেই। ওরা মানল না। তো আমি বাসায় গেলাম। রেললাইনের বস্তির ওখানে চিৎকার শুনছি। ছাদে গেলাম, গিয়ে দেখি বস্তির ঘরগুলোতে কী যেন ছিটাচ্ছে এক দল, সার্চলাইট ধরে রেখেছে। তারপর দেখছি গুলি করছে আর আগুন ধরে যাচ্ছে। লোকজন দৌড়ে বের হচ্ছে আর গুলি করছে। এভাবে ভোর হয়ে গেল। ঘুমের তো কথাই নাই।

অংশ: ‘বাবা, মা ও আমি’, কুর্রাতুল আইন তাহমিনা [আবদুল মুক্তাদির-এর কন্যা]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হিটস্ট্রোকে আরএফএল কোম্পানির মাঠকর্মীর মৃত্যু

ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল

বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান

আমার অভিভাবকেরা

কচুরিপানা পরিষ্কার করতে খালে নামলেন প্রাণ গোপাল

ফের কমলো সোনার দাম

ওবায়দুল কাদের ঘুমের মধ্যেও বিএনপি বিএনপি করতে থাকেন : সালাম

উপজেলা নির্বাচন / এমপিদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা : রাশেদা সুলতানা

হিট অফিসার শুধু পরামর্শ দেন, বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের: মেয়র আতিক

কারাবন্দিদের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতে ‘জরুরি আলাপ’

১০

রাজধানীতে হঠাৎ বাসে আগুন

১১

জুয়ার আসর থেকে ইউপি সদস্যসহ আটক ৮

১২

তাপমাত্রা নিয়ে আরও বড় দুঃসংবাদ

১৩

ড. মাহবুব উল্লাহর ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন 

১৪

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের এ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

১৫

সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ওয়ালটনে চাকরি, থাকছে নানা সুবিধা

১৬

বিএনপির আরও ৩ নেতা বহিষ্কার

১৭

নোমান গ্রুপে চাকরি, বেতন ৬০ হাজার

১৮

জানা গেল নারী বিশ্বকাপ শুরুর দিনক্ষণ 

১৯

ফল কেলেঙ্কারি / শাস্তি পাওয়া সেই এসএসএ’র হাতেই রেজাল্ট তৈরির কাজ!

২০
*/ ?>
X