গন্ধগোকুল স্তন্যপায়ী। দেহ স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে ঢাকা থাকে। ইংরেজিতে বলে এশিয়ান পাম সিভেট। বাংলায় তাল খাটাশ, ভোন্দর, লঙ্গর, লেনজা, সাইরেল বা গাছ খাটাশ নামে ডাকা হয়। তালের রস পান করে বলে একে তাড়ি বিড়ালও বলে কেউ কেউ। বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমছে।
প্রাণীটি নিশাচর। এরা মানুষের বেশ কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলায় বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, পাখির ছানা, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। খাদ্যের অভাব হলে এরা মুরগি, কবুতর এসব চুরি করে। ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে এরা। অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে সেটাকে চিনতে পারার ক্ষমতা রয়েছে এদের। এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার হতো।
এরা নিজেদের গন্ধ ছড়িয়ে সীমানা নির্ধারণ করে। পুরোনো গাছের মধ্যে থাকা গর্তে এরা ছানাদের বড় করে। গর্ত না পেলে ডালের ফাঁকে, পরিত্যক্ত ঘর, ইটের ভাটা, ধানের গোলা, তাল-সুপারির আগায় এরা ঘর বাঁধে। এদের ঘরে একটা মজার দৃশ্য দেখা যায়। মা-গন্ধগোকুল দেহের সঙ্গে লেজ মিলিয়ে একটি বৃত্ত বানায়। ছানারা ওই বৃত্তের বাইরে যায় না। ছয় মাস পর বড় হলে তারা বের হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয় উপত্যকা, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইনসহ এশিয়ার আরও অনেক দেশে এ প্রাণী বহুদিন ধরে আছে।
লেখক : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ
মন্তব্য করুন