

প্রতিটি মানুষেরই নিজের কিছু স্বপ্ন থাকে, যা পূরণের নিয়ম সবাই হয়তো জানে না, তাই এটি পূরণে অনেকের যুদ্ধ হয় ভিন্ন ভিন্নরকম। তবে অনেকে আবার নিজের অজান্তেই নিজের দেখা স্বপ্নের খুব কাছে চলে যায়। যেখানে পৌঁছাতে সহযোগিতা করে তার মনের সদিচ্ছা ও অন্তরের ভালোবাসা। তেমনই একজন স্বপ্নবাজ তরুণের সঙ্গে আজ পরিচয় হব।
নাম তানভীর শাহাজাদ। সম্প্রতি তিনি তার ভালোলাগার জায়গা থেকে এক মিনিট এক সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেটি আসলে পরীক্ষামূলক। তাই কাজটির কোনো শিরোনাম এখনো দেওয়া হয়নি।
এ ভিডিও নিয়ে জানতে চাইলে তানভীর কালবেলাকে বলেন, ‘ভিডিওর থিমটা মাথায় হুট করেই আসে। আমি এটাকে সাইকোলজিক্যাল আর্ট ড্রামা বলব। এ ভিডিওতে দেখানো চরিত্রটি সমাজের বাইরে পড়ে থাকা, একাকী, ভাঙাচোরা। যার মুখে কাটার দাগ, চোখে অস্থিরতা এবং মনে চাপাব্যথা। তার হাতে একটি প্লাস্টিকের পাখি; কিন্তু সেটিই তার একমাত্র সঙ্গী।’
ভিডিও শুরুর দৃশ্যে দেখা যায়, তানভীর পাখিটিকে জিজ্ঞেস করছে—‘তুই পাখি হবি কবে? বল না? আমিওবা কবে পাখি হব?’
কথা বলে জানা যায়, এটি তার নিজের ভেতরের ডাকে সাড়া না পাওয়ার প্রতিফলন। সে স্বাধীনতা চায়, উড়ে যেতে চায় কিন্তু তার জীবন তাকে বাধা দেয়। প্লাস্টিক পাখির সঙ্গে তার রাগ, কথা বলা, আবার স্নেহ—সবই তার মানসিক ভাঙন, নিঃসঙ্গতা এবং ভেতরের সংঘাতের প্রতীক। এরপর এক পর্যায়ে সে লুঙ্গির ভেতর থেকে মাউথ হারমোনিকা বের করে জোরে ফুঁ দেয়। এই মাউথ হারমোনিকা তার শৈশবের একটি স্মৃতি—তার মামা তাকে উপহার দিয়েছিলেন, যখন তার বয়স মাত্র দেড় বছর। মাউথ হারমোনিকা বাজানো মানে তার অতীতকে শেষবার স্পর্শ করা। ভিডিওতে দেখা যায়, স্লো মোশনে যখন চরিত্রটি মাউথ হারমোনিকা বাজাচ্ছে এবং ফাঁকা স্থানে প্লাস্টিক পাখিটি দুলছে—এ দৃশ্য মানুষের একাকিত্বের গভীর প্রতীক। ভিডিওর একদম শেষদিকে সে একটি কবরের পাশে দোয়া করে। যেটি শুধু গল্প নয়, বাস্তব।
এর কারণ জানিয়ে তানভীর বলেন, ‘কাজটির শুটিংয়ের দিনেই আমার নানু মারা যান, যিনি ছিলেন আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এ কারণে ভিডিওর শেষ অংশে শোক ও আধ্যাত্মিকতার ছায়া প্রতিফলিত হয়েছে।’
ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ভিডিওটি বানিয়েছি অনুভূতি ধরার জন্য—যেসব অনুভূতি কাগজে লেখা বা কথায় বলা যায় না। যেমন, অস্থিরতা, হারানো স্মৃতি, একাকিত্ব এবং মানুষের ভেতরের নীরব চিৎকার। যাদের আমরা ভালোবাসি, যাদের সঙ্গে কথা বলি, যাদের কাছে আমরা উড়ে যেতে চাই; কিন্তু যারা আসলে উড়তে পারে না।’
এ ভিডিওটা যেখানে শুট করা হয়েছে সেটা তার পুরোনো বাড়ির জমিতে। এ জঙ্গলের ভেতরেই ছিল পুরোনো বাড়িটি। তার শৈশব এ বাড়িতেই কেটেছে। যদিও সেখানে আর বাড়ি নেই—আছে শুধু জঙ্গল।
এরপর নিজের বিষয়ে এ তরুণ বলেন, ‘আমার বিষয়ে যদি বলি—আমি বাগেরহাটের সন্তান। আমার ইচ্ছা, আমি সাধারণের ভেতর থেকে অসাধারণ কিছু তৈরি করব। সাইকোলজিক্যাল কাজ করার ইচ্ছা তীব্র। মানুষের হৃদয়ে স্পর্শ করবে এমন কিছুই তৈরি করতে চাই। লেখাপড়াও বাগেরহাটেই। বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এখন বাগেরহাট সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে অধ্যয়নরত আছি। এটি এক মিনিট এক সেকেন্ডের একটি এক্সপেরিমেন্ট মাত্র।
মন্তব্য করুন