

ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ ফারিন খান। কাজ করেছেন বড় পর্দাতেও। কালবেলার মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন নিজের ক্যারিয়ার, ব্যক্তিগত জীবন এবং নাটক থেকে সিনেমায় ফেরার পরিকল্পনার কথা। লিখেছেন রাজু আহমেদ
ক্যারিয়ারের শুরুটা সিনেমা দিয়ে হলেও মাঝখানে বিরতির পর এখন নাটকেই বেশি সরব আপনি। আবার কবে সিনেমায় ফিরছেন?
সত্যি বলতে, গত বছরই বলেছিলাম যে ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬-এর দিকে সিনেমায় ফেরার একটা পরিকল্পনা আছে। এখনো সেই প্ল্যানেই আছি। বেশ কিছু সিনেমার কথাবার্তাও চলছে। আমি যেহেতু সিনেমার আর্টিস্ট, তাই সিনেমা নিয়ে আমার পরিকল্পনা সবসময়ই থাকে। মাঝের সময়টায় নাটক থেকে আমি অভিনয়টা শিখেছি। থিয়েটার বা প্রাচ্যনাট করার সময় মনে হয়েছিল, অভিনয়ে আমার অনেক গ্যাপ আছে। তাই নাটককে একটা ‘প্র্যাকটিস ফিল্ড’ বা গ্রুমিং সেশন হিসেবে নিয়েছি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য।
ইন্ডাস্ট্রিতে একটা গুঞ্জন আছে—যারা নিয়মিত নাটক করেন, তারা সিনেমার প্রস্তাব পান না। অথচ আপনার নাকি সিনেমার অফারই বেশি আসে?
এটা একদমই ভুল ধারণা। দর্শকদের উদ্দেশে এবং যারা এটা মনে করেন তাদের উদ্দেশে গর্ব করে বলতে চাই—আমার কাছে নাটকের চেয়ে সিনেমার প্রস্তাবই বেশি আসে। গত বছরও সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ এবং শিহাব শাহীন ভাইয়ের ‘দাগী’ সিনেমার জন্য আমাকে নক করা হয়েছিল। ডেট এবং অন্যান্য কারণে কাজগুলো করা হয়নি। তবে যারা কাজগুলো করেছেন, তারা প্রত্যেকেই যোগ্য এবং দারুণ কাজ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, যার রিজিকে যেটা আছে, সেটাই হবে। তাই কাজগুলো করতে না পারা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।
আপনার জীবনের একটা সাহসী ঘটনার কথা শুনেছি। প্রথম সিনেমার শুটিংয়ের জন্য নাকি মাকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন?
ঘটনাটা একদম সত্যি। তখন আমি জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, কিন্তু আমার পরিবার (এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি) খুবই রক্ষণশীল। মা ছাড়া কেউ জানত না আমি কাজ করব। শুটিংয়ের ঠিক আগে আত্মীয়স্বজনরা জেনে যায় এবং আমাকে বাধা দেয়। তখন আমার মায়ের বুদ্ধিতেই রাত ২টার সময় বাসা থেকে পালাই। মা বলেছিলেন, ‘তুই কি কাজটা করতে চাস? চল পালাই।’ এরপর একটা ট্রাকে করে গাবতলী আসি, সেখান থেকে বাইকে করে শুটিং স্পট গাজীপুরে যাই। ওই ২৮ দিন আমি আর মা শুটিং ইউনিটেই ছিলাম। মা পাশে ছিল বলেই এত বড় সাহস করতে পেরেছিলাম।
কাজল আরেফিন অমির ‘ফিমেল ৩’ নাটকে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের উপস্থিতি আপনাকে তুমুল জনপ্রিয়তা দিয়েছে। ‘ব্যাটারি গলি’র সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই।
‘ব্যাটারি গলি’ বা ‘ফিমেল ৩’ আমার জন্য একটা আশীর্বাদ। অনেক সময় সিনেমা করেও যে পরিচিতি পাইনি, ওই নাটকের ৩০ সেকেন্ডের ক্লিপ বা ‘ফিমেল ৩’-এর ছোট একটি চরিত্রের জন্য মানুষ আমাকে চিনেছে। অমি ভাই যখন কাজের প্রস্তাব দেন, কোনো ডায়ালগ ছিল না, শুধু হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম, কিন্তু অমি ভাইয়ের ওপর ভরসা রেখে কাজটা করি। রিলিজের পর এক রাতেই আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ৫০০-এর বেশি ফলোয়ার বেড়ে যায়। এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য ছিল।
অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের সঙ্গে আপনার জুটির জনপ্রিয়তা অনেক। সহশিল্পী হিসেবে তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
পর্দায় আমাদের কেমিস্ট্রি মানুষ পছন্দ করলেও বাস্তবে আমি ফারহান ভাইকে খুব ভয় পাই। আমি তাকে সম্মান করে ‘বড় ভাই’ ডাকি। তিনি কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস এবং পারফেক্টশনিস্ট। সেটে তিনি শুধু নিজের অভিনয় না, সহশিল্পীদের অভিনয় নিয়েও খুব সচেতন থাকেন। তিনি ভুল ধরিয়ে দেন, প্রয়োজনে বকাও দেন। তার ধমক খেয়ে আমি সেটে কান্নাও করেছি। তবে সহশিল্পী হিসেবে তিনি দারুণ এবং তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে জোর গুঞ্জন, আপনি নাকি ‘জংলি’ ও ‘দাগী’র মতো বড় বাজেটের সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন! ঘটনাটি কতটুকু সত্য?
ঘটনাটি শতভাগ সত্য এবং এটা আমি ক্যামেরার সামনেই বলছি। সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ এবং শিহাব শাহীন ভাইয়ের ‘দাগী’ সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমার নাটকের শিডিউল এবং ব্যক্তিগত কিছু কারণে সময় মেলানো সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া সিনেমা দুটির জন্য যে বিশাল প্রস্তুতির দরকার ছিল, হুট করে তা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি চাইনি আমার অপ্রস্তুতির কারণে এত ভালো প্রজেক্টগুলোর মান ক্ষুণ্ন হোক।
মন্তব্য করুন