প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেছেন, বাঙালির জাগরণ ৩টি। উনিশ শতকের নবজাগরণ, ভাষা আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। উনিশ শতকে রবীন্দ্রনাথকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদী।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্যই রচনা করেননি পাশাপাশি সেটির প্রত্যেকটি শব্দের ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন। আমাদের দেশে অনেক লেখক আছেন যারা নিজেদের কবিতাও ভালো করে ব্যাখ্যা করতে পারেন না, গানও না, আর ছন্দ বুঝা তো দূর।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন ও বাস্তবতা : রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২য় দিনে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বরীন্দ্রনাথ এক সময় ইংরেজি কবিতা ও সাহিত্যের খুব ভক্ত ছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন ইংরেজদের দ্বারা এ বাংলার নিরীহ মানুষগুলো নিপীড়িত তখন তাদের প্রতি তার ঘৃণা সৃষ্টি হয়। তিনি স্বপ্ন দেখেন এ পূর্ব দিগন্তে একজন মানবের আগমনের। যার মাধ্যমে মুক্ত হতে পারে এ দেশ। আর তার স্বপ্নের মানবই হয়তো ছিল এই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশের শিল্পকলা, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাসের মেলবন্ধন অটুট রাখা এবং শিক্ষা বিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ও অর্থায়নে নানামুখী কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফকরুল আলম । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এ ধরনের অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে যেন চিত্তের উৎকর্ষ সাধিত হয়, স্বপ্ন তৈরি হয়। রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু; আমাদের জীবনে তাদের যে বিশাল প্রভাব, সেখান থেকে আমাদের প্রজন্মকে ঋদ্ধ করে যেতে হবে। রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, অভিনেতা বা চিত্র শিল্পী তা নন, তিনি একটি দর্শন। যে দর্শনে আমাদের সামনে এগোতে হবে। তিনি ভাষা সাহিত্যে আমাদের সমাজকে, জীবনকে সাজিয়ে গেলেন আর রাজনৈতিকভাবে সেটা পরিপূর্ণ করে গেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
২য় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র পরিবেশনা। শুরুতেই যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন ইফতেখার আনোয়ার এবং যন্ত্রশিল্পীরা ‘তোমার খোলা হাওয়া’। এরপর ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যদল।
গান ও কবিতা পরিবেশন করেন সামিউল ইসলাম পুলক এবং মাহনাজ করিম হোসেন ‘প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ’। একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা রায় এবং ফাহিম হোসেন চৌধুরী ‘আজি প্রণমি তোমারে’, ‘তোমারেই করিয়াছি’, ‘জীবনের ধ্রুবতারা’। একক সংগীত পরিবেশন করেন জান্নাত আরা হেনরি।
এরপর সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু-কিশোর সংগীত দল ‘আজি ধানের ক্ষেতে’; এবং ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি’; সবশেষে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে পি.এফ.ডিএর ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের শিশুরা।
মন্তব্য করুন