গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করা, কৃষি খাতকে শক্তিশালী করা, শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো, তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় টেকসই উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটি দীর্ঘমেয়াদি কমিউনিটি উন্নয়ন কার্যক্রমে অব্যাহত রয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ১ কোটি ৮০ লক্ষাধিক মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা পৌঁছাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনার হিসেবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (১৮ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উদ্যোক্তা তৈরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালনা করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। মূল প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে যশোরে ফুল চাষভিত্তিক (ফ্লোরিকালচার) ক্লাস্টার, গাজীপুরে স্মার্ট ফার্মিং গ্রাম এবং যুব দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আমাদের ভূমিকা শুধু ব্যাংকিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২০২৪ সালেই আমাদের কমিউনিটি প্রোগ্রামগুলো থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে। ম্যানগ্রোভ রোপণ, কৃষি উদ্ভাবন, গ্রামীণ চক্ষু চিকিৎসা সেবা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো উদ্যোগগুলো ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব তৈরির লক্ষ্যেরই অংশ। নাসের এজাজ বলেন, ‘একটি সীমিত শাখা-সম্পন্ন বিদেশি ব্যাংক হিসেবে আমাদের নির্ভরযোগ্য স্থানীয় অংশীদাররাই আমাদের প্রকৃত শক্তি। আমরা সংখ্যার চেয়ে মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনে গুরুত্ব দিই।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান বিতপি দাস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো কমিউনিটিগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিটি প্রকল্প অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে পরিকল্পনা করি।’
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড শুধু একজন দাতা নয়, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তারা কমিউনিটির প্রয়োজনকে সম্মান করে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের দিকে নজর রাখে।’
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই বিরল, যেখানে কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র কৃষক বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, বিনিময়ে তা প্রচার বা স্বল্পমেয়াদি লাভ চায় না।
ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের সিইও একেএম আখতারুজ্জামান জানান, তাদের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অংশীদারিত্ব শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ চোখের হাসপাতাল থেকে, যা এখন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে সম্প্রসারিত হয়েছে।
ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন, আমরা মূলধারার বাইরের মানুষের সঙ্গে কাজ করি- যাদের একসাথে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকা প্রয়োজন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই এ কাজকে সম্ভব করে তুলেছে।
২০২৪ সালের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে ছিল- যশোরে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, হাওর অঞ্চলে জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি, মৌচাষে মূল্য সংযোজন, গাজীপুরে যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং দুর্যোগপ্রবণ চরাঞ্চলে বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি- সবকিছুই দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্থিতিশীলতা ও সম্ভাবনা তৈরির লক্ষ্যেই পরিচালিত।
মন্তব্য করুন