মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার অভিযোগপত্রে আসামি হলে নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও দলটি এর আগে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিল, শুধু দোষী সাব্যস্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
শনিবার (১৮ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
তিনি বলেন, সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধের কারণে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে ট্র্যাডিশনালি তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আবার কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে আমরা একমত হয়েছি।
‘তবে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে যদি মামলার চার্জশিট হয়ে যায়, তাহলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। যদিও সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, একটা লোকের বিরুদ্ধে চার্জশিটে দিলেই অযোগ্য হবে না, দোষী সাব্যস্ত হতে হবে।’
তাহের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ তো ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। এটা সাধারণ অপরাধ নয়। এটার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সময়কে ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত মর্মে চার্জশিট হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, অন্যান্য অপরাধের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ এক না। এটার জন্য শাস্তির ক্ষেত্রে দুই বছরের অপেক্ষার কথা বলেনি কমিশন। আমরাও তাই কথা বলিনি। চার্জশিটকে আমলে নিতে বলেছি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালেও এ রকম একটা আইন হয়েছিল। যেটা ক্রিমিনাল কেসের মতো না। তারা বলেছেন, বিশেষ সময়ের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতে বিচারপ্রক্রিয়ায় চার্জশিটকেই আমলে নিতে। সেটার সঙ্গে আমরা এগ্রি করেছি।
কমিশনের প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ নাকি দলের প্রস্তাব, এমন প্রশ্নে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে দোষী সাব্যস্ত হলেই কেবল নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন। তবে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের যে আইন, সেটা অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা (ঐকমত্য কমিশন) বলেছেন, এটা করলে লম্বা সময় লাগবে। তখন ট্রাইব্যুনালে রায় হবে, সেটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘ সময়। সে জন্যই আমরা তাদের মতে একমত হয়েছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল সম্পর্কে নায়েবে আমির বলেন, একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকারের মাঝে মিনিমাম সময় থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক লম্বা সময় থাকার সুযোগ নেই। যেহেতু বিশেষ পরিস্থিতিতে আসা এ সরকারের কাছে সংস্কারের বিষয় আছে, এ জন্য আমরা মিনিমাম সময় দিতে চাই। এরপর শিগরিরই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনই বেটার সলিউশন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষে হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলছে বর্তমান সরকার। এনসিপির নেতাকর্মীরাও একই দাবি করে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য জোর দিয়ে আসছেন। এ নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের সাবেক আইজিসহ কয়েকজন সদস্যের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধে ট্রাইব্যুনালে।
মন্তব্য করুন