ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন থামাতে শেষ আশার মতো আঘাত হানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস।ইসরায়েলে দখলকৃত ভূখণ্ডে চালানো সেই বিস্ফোরক হামলার জেরে ভয়াবহ প্রতিশোধ শুরু করে তেল আবিব। টানা বোমাবর্ষণ ও সামরিক আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজা উপত্যকা। প্রাণ হারান অন্তত ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হন আরও এক লাখের বেশি।
মূলত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এবং সৌদি-ইসরায়েল মৈত্রীর সম্ভাবনা থামিয়ে দিতে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয় বলে উঠে এসেছে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালায় হামাস। পরে গাজার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানের সময় হামাস নেতাদের বৈঠকের কিছু নথি উদ্ধার করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
রোববার (১৮ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এসব নথির বরাতে জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের গতি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
এক নথিতে সিনওয়ারের মন্তব্য ছিল, কোনো সন্দেহ নেই, সৌদি-ইহুদিবাদীদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কাজ খুব দ্রুত এগোচ্ছে। আর এই চুক্তি হলে আরব ও ইসলামিক বিশ্বের অন্যান্য দেশ সৌদির পথ অনুসরণ করবে।
এই আশঙ্কা থেকেই হামলার সিদ্ধান্ত নেয় হামাস, যার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে আবারও কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক রুখে দেওয়া।
হামলার কয়েক মাস আগেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইসরায়েল তাদের পারস্পরিক মতপার্থক্য কমিয়ে আনছে। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তিও প্রায় চূড়ান্তের পথে ছিল। ঠিক সেই সময় হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে পুরো পরিস্থিতি বদলে দেয়।
অপর এক নথিতে দেখা যায়, হামাস শুধু গাজায় নয়, বরং পশ্চিম তীরেও সংঘর্ষ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে আড়াল হয়ে যেতে না দেওয়া।
যুদ্ধ গড়িয়েছে ৫০০ দিনে। এখনো থামেনি ইসরায়েলের হামলা, ফুরায়নি ফিলিস্তিনিদের রক্তঝরা। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, হামাস তাদের কৌশলে আংশিক সফল হয়েছে। সৌদি আরব এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেনি।
সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট করে বলেন, যতদিন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হচ্ছে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু না হচ্ছে, ততদিন দখলদারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কাগজে স্বাক্ষর করব না।
এই কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের মাশুল দিয়েছে গাজার সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি। ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল। খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংকটে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্ন রক্ষা করতে গিয়ে যে কৌশল নেওয়া হয়েছিল, তা সত্যিই সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ককে থামিয়েছে কিনা- তা সময়ই বলবে। তবে এই পথে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছে, তা আজ ইতিহাসের পাতায় রক্তে লেখা রয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন