কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৩২ বছরে রাজধানীতে ৩৬ ফ্ল্যাটের মালিক রাজউক কর্মচারী!

বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১০ নম্বর রোডের ছয়তলা বাড়ি। ছবি : সংগৃহীত
বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১০ নম্বর রোডের ছয়তলা বাড়ি। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা আমীর খশরুর বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে তার স্ত্রীর নামেও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট।

জানা গেছে, খশরু নব্বই দশকে রাজউকে উপ-ইমারত পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। তখন তার বেতন স্কেল ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৮০ টাকা, মাসে মূল বেতন ছিল চার হাজার টাকার আশপাশে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে এক যুগেরও বেশি সময় তিনি সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।

রোববার (১৮ মে) এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জাতীয় দৈনিক সমকালে প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে খসরুর বেতন ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। তবে রাজধানীতে তার এবং তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩৬টি ফ্ল্যাট। উত্তরায় রয়েছে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট। সব মিলিয়ে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি।

বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১০ নম্বর রোডের ৭৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়িটির মালিক আমীর খশরু। বাড়ির নিচতলায় পার্কিং, গার্ডরুম, একটি ফ্ল্যাট ছাড়াও বাড়িটিতে ১১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশের বাড়ির বাসিন্দারা জানান, এই বাড়ির মালিক আমীর খশরু; রাজউকে বড় পদে চাকরি করেন। এ এলাকায় তার একাধিক বাড়ি রয়েছে বলেও জানান তারা।

একই প্রকল্পের ১১ নম্বর রোডের ৬৯ ও ৭১ নম্বর হোল্ডিংয়ে দুটি প্লটেরও মালিকও এই আমীর খশরু। তিন কাঠা আয়তনের দুটি প্লটকে একত্র করে সেখানে ছয়তলা আরেকটি বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি।

ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী ও একাধিক বাসিন্দা জানান, এ বাড়ির তিনটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন আমীর খশরু। তারা বলেন, একেকটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। নিচতলায় পার্কিং, গার্ডরুম ও একটি ফ্ল্যাট ছাড়াও ভবনটিতে মোট ১১টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

এই রাজউক কর্মকর্তা বলেন,

এই দুটি প্লটের মালিক আমার স্ত্রী। যখন বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তখন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আমি কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড (মালিকানাস্বত্ব) কিনে নিই। তখন একেকটি অ্যাওয়ার্ড ৪০-৫০ হাজার টাকায় কেনা যেত। পরে ডেভেলপারকে দিয়ে বাড়ি করি এবং অর্ধেক ফ্ল্যাট পাই।

বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১২ নম্বর রোডের ৬৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে তিন কাঠার ওপর আরেকটি ছয়তলা বাড়ির সঙ্গে এই রাজউক কর্মকর্তার নাম জড়িয়ে আছে। এ বাড়িতে ১২টি ফ্ল্যাট আছে। তবে এই বাড়ির মালিকের নাম আসলাম বলে জানিয়েছেন বাড়ির এক নিরাপত্তাকর্মী। আমীর খশরুর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী জানান, খশরুর ভাগনে হয় এই আসলাম। বাড়িটির মূল মালিক খশরু নিজেই। বোন ও ভাগনের নামে বাড়িটি করেছেন তিনি।

এ বাড়ির বিষয়ে আমীর খশরু বলেন,

আমার আত্মীয়স্বজনের কার কী সম্পত্তি আছে, তা আমি জানি না।

আমীর খশরুর প্রথম করা বাড়িটি পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৭৪১ নম্বর হোল্ডিংয়ে। ছয়তলা এ বাড়িতে রয়েছে ১৭টি ফ্ল্যাট। একসময় এই বাড়িতেই থাকতেন তিনি।

বাড়িটির এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, বাড়ির মালিক খশরু তেমন একটা আসেন না। তবে একটি ফ্ল্যাটে তার একজন আত্মীয় থাকেন। সেই আত্মীয়ই ভাড়া তুলে মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেন।

এ বাড়ির বিষয়ে আমীর খশরু জানান, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার এই বাড়িটিই কেবল তার নামে। তার মা পৈতৃক সূত্রে সেখানে এক কাঠা জমি পেয়েছিলেন। পরে আরও কয়েক কাঠা জমি কিনে তিনি পারিবারিকভাবে বাড়িটি করেছিলেন।

উত্তরার দুই প্লট

উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ২২/এ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে এই রাজউক কর্মকর্তার। এই প্লটটির বাজারমূল্য আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর প্লটের মালিকও তিনি। এ প্লটটিরও আনুমানিক বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা।

প্লটের বিষয়ে আমীর খশরু বলেন, ‘একটি প্লট আমার মায়ের নামে।’

ভাড়াটিয়ারা বলছেন, অন্য প্লটটিও আপনার। আপনি ভাড়া তোলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু বলেননি তিনি।

রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোটায় পূর্বাচলে আরেকটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বরখাস্ত থাকার কারণে রাজউক থেকে তাকে প্লটের আইডি দেওয়া হয়নি।

বিভিন্ন প্লটের ফাইল আটকে রেখে বাণিজ্য করার অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন আমীর খশরু। সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার নামে একটি মামলা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই মামলা থেকে দায়মুক্তি পান তিনি। তখন তার আইনজীবী ছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। আমীর খশরু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে খশরুর বিরুদ্ধে দুদক আবার মামলা করে। সে মামলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজউক। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছে।

১৯৯৩ সালে রাজউকে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে রাজউকের বিএনপিপন্থি শ্রমিক ইউনিয়নে সক্রিয় ছিলেন আমীর খশরু। একসময় ইউনিয়নের সভাপতিও হয়েছিলেন। ওই সময় রাজউকে একচেটিয়া প্রভাব ছিল তার।

গত ৬ আগস্ট দলবল নিয়ে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমানকে চাপ দিয়ে ইন্সপেক্টর পদ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে রাজউক এখনো তাকে কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গায় পদায়ন করেনি।

পরে রাজউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে গত অক্টোবরে তাকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। তিন মাস পর আমীর খশরু আবার রাজউকে বদলি হয়ে আসেন।

বদলির বিষয়ে তিনি জানান, তাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝতে পেরে তাকে ফিরিয়ে এনেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সন্তানকে পুলিশে দিয়ে বিএনপি নেতার আবেগঘন পোস্ট

এবার পর্দার ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে গ্রেপ্তারের ট্রল

আম পাড়াকে কেন্দ্র প্রতিপক্ষের হামলায় মাদ্রাসার শিক্ষক নিহত

যে কারণে থাইল্যান্ড যাচ্ছিলেন নুসরাত ফারিয়া

‘জগত মঞ্চ’ নিয়ে ফিরেছে পিয়ালে আহত ‘অড সিগনেচার’

শাহজালাল মাজারে ওরস শুরু, বন্ধ নাচ-গান

সমকামিতা-ট্রান্সজেন্ডার প্রশ্রয়ের প্রশ্নই আসে না : সারজিস আলম

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়মান সাদিকের অনুপ্রেরণামূলক সেশন

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে মিনিস্টার ইলেকট্রনিক্স

নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন এনসিপি নেতার

১০

যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ছাত্রদলের 

১১

খালেদা জিয়াকে হয়রানিতে দুদকের সাবেক ৩ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

১২

৯ জিম্মির বিনিময়ে ২ মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের

১৩

পাওনা টাকার জেরে হত্যা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজনের যাবজ্জীবন

১৪

টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ‘কফিন মিছিল’

১৫

ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হলো নুসরাত ফারিয়াকে 

১৬

‘আমি যে তাদের স্বার্থপর ছেলে’ লিখে যুবকের আত্মহত্যা

১৭

ইসরায়েলকে এআই সেবা দেওয়ার কথা স্বীকার মাইক্রোসফটের

১৮

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন অলি আহমদ

১৯

ফার্ম কর্মচারীকে জবাই করে হত্যা

২০
X