২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই)। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে দেশের ঔষধ শিল্প আরও শক্তিশালী হবে।
বুধবার (৪ জুন) সমিতির সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঔষধের এপিআই শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে বিভিন্ন শুল্কছাড় প্রস্তাব করায় ঔষধের এপিআই শিল্প আরও প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে অতি উচ্চমূল্যের ক্যান্সার নিরোধী ঔষধসমূহ বাজারজাত করার পথ সুপ্রশস্ত হবে। দেশে ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানি হয়ে থাকে।
এই আমদানীকৃত অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এপিআই শিল্পের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিকল্পে এই শুল্কনীতি সাহায্য করবে। একই সাথে দেশেই বহু এপিআই তৈরি হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। ফলে ক্যান্সার নিরোধী সমস্ত ঔষধের মূল্যের স্থিতিশীলতা দাঁড়াবে এবং প্রাপ্যতা বাড়বে। সাধারণ জনগণের জন্য উচ্চ প্রযুক্তি ও মানের ঔষধ সবসময় প্রাপ্তির বিপুল নিশ্চয়তা দেশেই তৈরি হবে।
আমরা আশা করি ঔষধ শিল্প শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণই নয়, আরও কিছু প্রণোদনা পেলে অন্যতম রপ্তানি খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঔষধ শিল্পের বিনিয়োগে ব্যবহৃত স্যান্ডউইচপ্যানেল ও ল্যাবরেটরি ফার্নিচার সমূহে এখনও উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। অথচ আগে এটি মাত্র ১ শতাংশ হারে ছিল। আমরা আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্টরা এখানে বাড়তি নজর দিবেন এবং নতুন ঔষধ শিল্পের জন্য প্যানেলের ক্ষেত্রে এই শুল্ক পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসবে।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ঔষধ শিল্প সমিতি জানায়, চিকিৎসা ব্যবস্থায় উপরোক্ত সুযোগটি সম্প্রসারণ করায় দেশের রোগীদের অনেক উপকার হবে। এছাড়া এবারের বাজেটে সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ভেহিক্যালকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি মনে করে, সরকার এবারের বাজেটে যে সমস্ত ভালো উদ্যোগ নিয়েছে সেটি সাধুবাদযোগ্য। তবে যারা এই ভালো উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করবেন বিশেষত রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাদেরকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ও আন্তরিক হতে হবে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া উপরোক্ত সুবিধাসমূহের পাশাপাশি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা এবং চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন জানানো যাচ্ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে ননলিস্টেড কোম্পানিসমূহের জন্য সর্বনিম্ন ট্যাক্সের হার ছিল ২৫ শতাংশ যা এই বাজেটে বৃদ্ধি করে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্ত সর্বক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রায় সমস্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি একটি প্রতিকূল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়ে কর্পোারেট ট্যাক্সের হারের এই বৃদ্ধি ননলিস্টেড ফার্মা কোম্পানির ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করবে। এমতাবস্থায় কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ২৫ শতাংশ রাখার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্যাক্স ফ্রি লিমিট বাড়ানো হয়নি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শর্ত পরিবর্তনের কারণে শিল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমে যাবে। বিষয়টি বিবেচনা করার আবেদন করা গেল।
সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানিসমূহের জন্য ন্যূনতম কর্পোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ মোট বিক্রয় আয়ের ওপর ১ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যা পূর্বে ০ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। যেহেতু অধিকাংশ ফার্মা কোম্পানি এখন মুনাফা করতে হিমশিম খাচ্ছে সেহেতু ন্যূনতম ট্যাক্সের এই বৃদ্ধি ফার্মা কোম্পানিসমূহের সক্ষমতাকে প্রবলভাবে হ্রাস করবে।
মুনাফা না করলে এই ট্যাক্স কোম্পানিসমূহকে তাদের মূলধন থেকে প্রদান করতে হবে- যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম ট্যাক্সের হার পূর্বের জায়গায় রাখার আবেদন করা গেল।
মন্তব্য করুন