মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক বিভাগের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন মাসুকা বেগম নিপু। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী মাসুকা বেগমের বয়স ৪০ পেরিয়েছে। ছিলেন অবিবাহিত। মা হারা এই শিক্ষকের জীবনে শিক্ষার্থীরা ছিল তার সন্তানের মতো। গত সোমবার বিমান দুর্ঘটনায় তার চিরপ্রয়াণে পরিবারজুড়ে নিয়ে এসেছে শোকের ছায়া।
এদিকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় শিক্ষকের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে তার কবরে গার্ড অব অনার দিয়েছে বিমানবাহিনী। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও গার্ড অব অনার প্রদান করে।
শিক্ষক মাসুকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিলোকুট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। মা সমিরন বেগম মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মাসুকা। পরিবারের একমাত্র ভাই থাকেন প্রবাসে, বাবা অসুস্থ! একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। সোহাগপুরে বড় বোন পাপিয়ার বাড়ি। মৃত্যুর আগে মাসুকা জানিয়েছিলেন লাশটা যেন তার বোনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাই সেখানে দাফন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স করা মাসুকা চাকরির সুবাদে চলে যান ঢাকা। প্রথমে মিরপুরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন। এরপর যোগ দেন মাইলস্টোন স্কুলে।
মাসুকার শিক্ষক সরকারি জিল্লুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু হানিফা কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘মাসুকার ডাকনাম ছিল নিপু। তাকে আমি নিপু বলেই ডাকতাম। সে ছিল আমার প্রিয় ছাত্রী। শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেওয়ার পরও সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।’
মাসুকার বাবা সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার মেয়ে তো আর ফিরে আসবে না। আমাকে বাবা বলেও ডাকবে না। আমার মনের কষ্ট, তাকে বিয়েটাও দিতে পারলাম না। আল্লাহ আমার এই মেয়েকে বেহেশত নসিব করুন।’
গার্ড অব অনার শেষে বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মশিউর রহমান বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার দিন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাণ বাঁচাতে যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এর আগে মাসুকার কবরে গিয়ে মোনাজাত ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহসভাপতি এভিএম মমিনুল হক, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা নিহত শিক্ষক মাসুকার ভগ্নিপতি ও বড় বোনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এ সময় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘এ রকম জনবহুল জায়গায় বিমান প্রশিক্ষণের কোনো সুযোগ নেই। তিনি এরকম জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণের কারণ ও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।’
মন্তব্য করুন