ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, নারীদের প্রসবপূর্ব পরিষেবা, চিকিৎসা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা) ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
বুধবার (৩০ আগস্ট) এ ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরবান হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রকল্প প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে- যার আওতায় বিস্তৃত পরিসরে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাও দেওয়া হবে। নগর এলাকায় ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ২৫ লাখ শিশু পরিষেবা পাবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায় সেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু নগর এলাকায় দরিদ্রদের জন্য সীমিত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা রয়েছে। তাই, দরিদ্র মানুষ ও বস্তিবাসীরা প্রায়ই আরও ব্যয়বহুল বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়। জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়নের সাথে সাথে নতুন নতুন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ উদ্ভূত হচ্ছে- যার মধ্যে ডেঙ্গুসহ সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগও বেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি নারীদের প্রসবপূর্ব পরিষেবাগুলোকে আরও ভালো করবে। এ প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি দরিদ্র নারী গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারটি চেকআপের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক উচ্চ রক্তচাপের স্ক্রিনিং ও ফলোআপ চিকিৎসার সুযোগ পাবে। প্রকল্পটি সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও পরিবার-পরিকল্পনা ক্লিনিকে দরিদ্রদের সেবাপ্রাপ্তির ব্যয় হ্রাসেও সহায়ক হবে। এ ছাড়াও এই প্রকল্প রোগবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়াজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি দূষণ রোধ করে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালাবে। প্রকল্পটি শহর ও পৌরসভাগুলোতে সংক্রামণ রোগের প্রাদুর্ভাগ ঠেকাতে কৌশল ও কর্মপদ্ধতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এই প্রকল্পের আওতায় মৌসুমভিত্তিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে কাজ করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ও এ প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার ইফফাত মাহমুদ বলেন, মশাবাহিত ও সংক্রামক রোগের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মশাকে লক্ষ্য করে স্প্রে করা ও লক্ষ্যবিহীন লার্ভা নিয়ন্ত্রণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নয়। যেহেতু মশার জীবনচক্র বলবায়ু পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত, তাই প্রকল্পটি মশা নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষাগারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি উদ্ভাবনী মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ভিত্তিক হস্তক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা তৈরি করবে।
উল্লখ্যে, বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এই ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রথম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাংক গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে মোট ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।
মন্তব্য করুন