দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসির প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া, অর্থাৎ কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার (কিউআইও) চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কিউআইও আবেদন প্রত্যাহার করায় পূর্বে ইস্যু করা সম্মতিপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিএসইসির ৯৬৪তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সম্মতিক্রমে দুয়ারের ‘কিউআইও আবেদন প্রত্যাহারপত্র’ গ্রহণ করা হয় এবং গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ইস্যুকৃত কিউআইও সম্মতিপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসি কিউআইও-এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য কমিশনে আবেদন করে। এরপর ৯ জুন অনুষ্ঠিত ৯১১তম কমিশন সভায় কোম্পানিটিকে শর্তসাপেক্ষে অভিপ্রায়পত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী দলিলাদি দাখিল করলে ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯৩৪তম সভায় কোম্পানিটিকে কিউআইও-এর জন্য সম্মতিপত্র প্রদান করা হয়।
এই সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে দুয়ার কোম্পানি চলতি বছরের ১৯ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শেয়ার সাবস্ক্রিপশন গ্রহণের সময় নির্ধারণ করে। তবে এরই মধ্যে গণমাধ্যমে কোম্পানিটির বিভিন্ন গ্রাহকসেবা সংক্রান্ত চুক্তি, আয় ও মুনাফার তথ্য নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বিএসইসির দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৩৯তম কমিশন সভায় কিউআইও প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসি কমিশনে একটি আবেদন করে, যাতে তারা কিউআইও প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কমিশন আবেদনটি বিবেচনা করে চূড়ান্তভাবে কিউআইও বাতিল করে।
এদিকে একই কমিশন সভায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত একটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৯ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
এই অনিয়মে ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিজিআইসি)–এর যথাযথ নজরদারির ঘাটতি থাকায় তাদের এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড তাদের আইপিও ফান্ডের ৮০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ অনুমোদন ছাড়া সহযোগী প্রতিষ্ঠানে শেয়ার কেনায় ব্যবহার করায় কোম্পানিটিকে ৯০ কোটি টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যর্থ হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচ পরিচালকের প্রত্যেককে ২০ কোটি টাকা করে মোট ১০০ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
একই সভায়, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের স্পন্সর ফারজানা আজিম এবং তার ভাই মামুন আজিম নিষিদ্ধ সময়ে শেয়ার লেনদেন করায় উভয়কে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসি তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ৪৬ কোটি টাকার ঋণকে শেয়ারে রূপান্তরের প্রস্তাব করলেও কমিশন তা নামঞ্জুর করেছে।
দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসির কিউআইও চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে। বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত বাজারে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন