স্বর্ণের পর এবার বিশ্ববাজারে রুপার দামও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার প্রত্যাশায় রুপার দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চে উঠেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রতি আউন্স স্পট রুপার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৫৭ ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চলতি বছরে রুপার দাম প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০১০ সালের পর সবচেয়ে বড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি।
একই দিনে স্বর্ণের দামও প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ডলার প্রতি আউন্স ছাড়ায়। তামার দামও ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ওএএনডিএ’র বিশ্লেষক জাইন ভাওদা বলেন, খুচরা বিনিয়োগকারীরা এখন রুপাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করছেন। সরবরাহ সংকট ও শিল্প খাতে চাহিদা বাড়ায় আগামী ছয় মাসে দাম ৫৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কোমেক্স গুদামে বিপুল বিনিয়োগ হওয়ায় লন্ডনের স্পট মার্কেটে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা দাম আরও বাড়িয়েছে। এইচএসবিসির বিশ্লেষক জেমস স্টিল বলেন, মার্কিন আমদানি শুল্কের আশঙ্কায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, ফলে লন্ডন ও নিউইয়র্ক বাজারের দামে পার্থক্য বেড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় রুপা যুক্ত হওয়ায় নতুন করে শুল্ক আরোপের জল্পনা শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে কোমেক্সের শেয়ারমূল্যও রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।
লন্ডন বুলিয়ান মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর শেষে লন্ডনের ভল্টে ২৪ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন রুপা ছিল, যার মূল্য প্রায় ৩৬.৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এক আউন্স স্বর্ণ কিনতে ৮২ আউন্স রুপা লাগে—যা গত এপ্রিলে ছিল ১০৫ আউন্স।
মেটালস ফোকাসের বিশ্লেষক ম্যাথিউ পিগট বলেন, রুপা এখন শুধু শিল্প ধাতু নয়, বিনিয়োগেরও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। ২০২৬ সালের মধ্যে দাম ৬০ ডলার ছাড়াতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগের পাশাপাশি সৌর প্যানেল, ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়িতে রুপার ব্যবহার বাড়ছে, যা দাম বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। মরগান স্ট্যানলি জানিয়েছে, রুপা-সমর্থিত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বেড়েছে, আর চীনের সৌর প্রকল্প বৃদ্ধিতে শিল্প খাতের চাহিদাও বাড়ছে। যদিও সৌর খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হতে পারে, তবুও বিশ্লেষকদের ধারণা—রুপার দাম নিকট ভবিষ্যতে শক্ত অবস্থানেই থাকবে।
মন্তব্য করুন