মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতিতে চলমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ‘সংকুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য মুদ্রানীতিতে বাজারে অর্থের জোগান কমাতে নীতি সুদহার আরও বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আইএমএফের পরামর্শে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগামী ৬ মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান। ওই সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
নতুন মুদ্রানীতিতে রেপোর সুদ হার ৬ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। রিভার্স রেপো হার আগের ৪ দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। রেপো ও রিভার্স রেপোর এই নতুন হার ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারির মুদ্রানীতিতে রেপোর সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর রিভার্স রেপো হার আগের ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট।
রেপো রেট বৃদ্ধি করায় ব্যাংকগুলোর অর্থ নেওয়ার খরচ বাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে।
ব্যাংক ঋণের সুদহারে এতদিনের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দিয়ে ‘রেফারেন্স রেট’ অনুযায়ী সুদ হার নির্ধারণের নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে।
এসএমএআরটি (স্মার্ট-সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ) নামের এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে রেফারেন্স। এরসঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে।
কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ সামাল দিতে আরো ১ শতাংশ যোগ করতে পারবে সুদ হারে।
এ ছাড়া, মনিটরি টার্গেটিং’ এর বদলে ‘ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিং’ ঠিক করার মত পরিবর্তনের সঙ্গে বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি চালু করার মত নতুন সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে।
তাতে প্রচলিত মুদ্রানীতির কাঠামো বদলে বাংলাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে ভিন্ন ধারার এক মুদ্রানীতি, যা আন্তর্জাতিক পদ্ধতির সঙ্গে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে।
নতুন মুদ্রানীতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা সরবরাহ দিক ঠিক রেখে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছি, যাতে সরকারি ঋণেও অর্থ খরচ বাড়ে। টাকার সরবরাহ কমিয়ে এনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই মূল উদ্দেশ্য।’
মুদ্রানীতি ঘোষণার অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব ‘দুই পদ্ধতিতেই’ করবে। অর্থাৎ, আগে যে পদ্ধতিতে করা হত, সেভাবেও করা হবে, আবার বিপিএম৬ পদ্ধতিতেও করা হবে। তরে আমরা বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য হিসাব করলেও তা প্রকাশ করব না। পৃথিবীর কোনো দেশ তা প্রকাশ করে না।’
আগামী জুলাই-ডিসেম্বর’২৩ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৩ শতাংশ, গত মুদ্রানীতিতে যা ছিল ৩৭দশমিক ৭ শতাংশ।
আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০.৯ শতাংশ, গতবার ধরা হয়েছিল ১৪.১ শতাংশ। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬.৯ শতাংশ, গতবার যা ধরা হয়েছিল ১৬.৯ শতাংশ।
মন্তব্য করুন