ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কর প্রদান করেন না। ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা কর বকেয়া পরে আছে। তেমনি রেনেসাঁস হোটেল, ওয়েস্টিন হোটেল ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও এমন পরিমাণ কর বকেয়া আছে। তারা সিটি করপোরেশন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করেও কর প্রদান করে না, এটা অনৈতিক।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে ২০ দিনব্যাপী পৌরকর মেলার উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, রাজধানীর ৩৬ শতাংশ মানুষের হোল্ডিং নম্বরই নেই। প্রভাবশালী যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যাক্স দেন না, যাদের কাছে অনেক বকেয়া আছে, তারা এবার আর কোনো ছাড় পাবেন না। স্বপ্রণোদিত হয়ে বকেয়া ট্যাক্স পরিশোধ না করলে সিটি করপোরেশনের লোকজন বাড়িবাড়ি গিয়ে বিরক্ত করবে ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, কর তালিকায় থাকা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ন্যূনতম এক লাখ টাকা কর বকেয়া আছে প্রায় ২৫ হাজার লোকের কাছে। কর তালিকার বাইরে আছে এর প্রায় পাঁচ গুনেরও বেশি। মেলা পরবর্তী সময়ে কর তালিকায় সব নাগরিকের আনার জন্য এ্যাসেসমেন্টের জন্য লোক পাঠানো হবে। তাই, নাগরিকদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পৌরকর প্রদান করুন। মেলায় আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ রিবেটের ব্যবস্থা রেখেছি। কোনো হয়রানি যেন না হয়, সেজন্য অনলাইন পোর্টাল খোলা রাখা হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স যেমন ঘরে বসে পাচ্ছেন তেমনি হোল্ডিং ট্যাক্স ও ঘরে বসে দেওয়া যাবে।
প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের কর দেওয়া দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য। তাই সবাই কর প্রদান করুন। যাদের নিকট অনেক বেশি বকেয়া তাদের অতি শিগগিরই ক্রোকের নোটিশ দেওয়া হবে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, সাধারণ মানুষ কর দিতে চায়, কিন্তু মানুষের ভ্রান্ত ধারণা আছে কর দেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল তাই তারা কর দিতে আসে না। এবার আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পৌরকর অনলাইনে প্রদান প্রক্রিয়া সহজিকরণ করা হয়েছে। ঘরে বসেই কর দেওয়া করা যাবে।
প্রশাসক বলেন, আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি ডিএনসিসির এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো থেকে কর আদায় করা গেলে আমাদের উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে আদায় বেশি হতো। উদাহরণস্বরূপ তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, বসুন্ধরার সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি তারা ট্যাক্স দিতে রাজি হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা কর দেয় বা যারা কর দেয় না সবাইকেই সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। স্থায়ী লোকবল নিয়োগ করতে গেলে সেখানে তাদের বেতন ভাতা দিতে রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়নে রাজস্বের বড় অংশ ব্যয় হয়। এই ব্যয়কে মাথায় রেখে আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ও পৌরকর প্রদান সহজিকরণ করতে এই পৌরকর মেলার আয়োজন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, আমরা ডিএনসিসির অঞ্চলগুলোতে গণশুনানি করে দেখেছি নাগরিকদের রাস্তা, ড্রেনেজ ও সড়কবাতির চাহিদা অনেক, সে অনুপাতে রাজস্ব আদায় নেই। রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় চিহ্নিত করেছি, প্রথমত ডিএনসিসির নতুন সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকা কর তালিকার অন্তর্ভুক্ত নেই। আবাসিক এলাকাগুলোতেও বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে আমরা কোনো রাজস্ব পাচ্ছি না। নতুন করে হওয়া প্রচুর দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কর প্রদানের তালিকার আওতায় আনতে হবে।
এসময় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহসহ ডিএনসিসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন