

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বিএনপির অর্থদাতা’ ট্যাগ দিয়ে দখল করা হয়েছিল ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপ। ডেমরা, সোনারগাঁয়ের কারাখানা; বাংলামোটরে অফিস ও ধানমন্ডির বাসা দখল করে নিয়েছিল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা। ট্রান্সপোর্টের কাজে ব্যবহৃত শতাধিক ট্রাকও দখলে নেয় তারা। বাসা, অফিস, কারাখানা দখল করার পাশাপাশি এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে করা হয় একের পর এক মামলা। এসব মামলায় ৪ বছরের বেশি সময় জেল খাটতে হয় তাকে।
এই লুটপাটের নেতৃত্বে ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার বড় ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান খান লিটন। তাদের হাতিয়ার ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র একাধিক কর্মকর্তা। রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠা পুলিশ ও দেশের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক চক্রের থাবায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী এরশাদ আলী।
শনিবার (০১ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার এমপি শামীম ওসমান, রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ষড়যন্ত্র করে আমাকে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে উৎখাত করেছে। আমাকে বিএনপির অর্থদাতা তকমা দিয়ে একের পর এক রাজনৈতিক মামলা, হামলা চালানো হয়। আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়, বাসা, ট্রাক, গুদাম ও স্টিল কারখানার শতশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার ছেলের দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর রাজনৈতিক বিরোধের জেরে আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা এখন ৪২টি। ২০১০ সাল থেকে একে একে এরশাদ গ্রুপের কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে প্রধান কার্যালয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি দখল করে। ধানমন্ডির বাসভবন তাদের ক্যাডার গোল্ডেন খোকনকে দিয়ে দখল করায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম দখল করে নেয়। এ ছাড়া সোনারগাঁয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস ও ডেমরার স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখলে নেয়। এই আজিজের নেতৃত্বে আমার দুই কারখানার আড়াইশো কোটি টাকার মেশিনসহ মালামাল লুট করা হয়। এমনকি আমার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার ১৩৭টি ট্রাক এখনো তাদের দখলে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ২০ বিঘা জমির মাটি লুট করে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পালানোর সময় দর্শনা সীমান্ত থেকে আটক করা হয় আজিজুর রহমান আজিজকে। পরে তাকে মিন্টো রোড ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। চাঁদাবাজির মামলায় আজিজকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত পাঠানো হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। আজিজের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এলাকায় এখনো তার ২৫ থেকে ৩০টি ক্যাডার বাহিনী সক্রিয়- বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এরশাদ আলী। তিনি বলেন, আজিজ বাহিনীর লোকেরা এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। আজিজের হাতে নির্যাতিতরা এখন মুখ খুলছে। এই আজিজসহ যারা আমার প্রতি অন্যায় অবিচার করেছে, তাদের বিচার হউক। শুনেছি, টাকা খরচ করে জামিনে বেরিয়ে আসার পায়তারা করছে।
মন্তব্য করুন