

রংপুরের তারাগঞ্জে বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত সেই রূপলালের মেয়ের বিয়ে আগামীকাল রোববার। কিন্তু নূপুর রবিদাসের বিয়েতে আশীর্বাদ করার জন্য বাবা রূপলাল রবিদাস আজ পৃথিবীতে নেই।
শোকানন্দের মধ্যদিয়ে পিতৃহারা নূপুরের গায়ে হলুদ আজ শনিবার (১ নভেম্বর)।
গত শুক্রবার বিয়ের গেট ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু করেন ডেকোরেটর শ্রমিকরা। শনিবার বাড়িতে চলছিল প্রস্তুতি। বাড়িতে বিয়ের আয়োজন, কিন্তু নেই আনন্দ। পরিবারের সদস্যরা মনমরা হয়েই পালন করছেন বিয়ে পূর্ববর্তী পূজাসহ তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অন্য সব আয়োজন।
রূপলালের মৃত্যুর শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠলে পুনরায় ওই আলোচনা চূড়ান্ত করে রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের কমল রবিদাসের (ডিপজল) সঙ্গে নূপুরের বিয়ের দিন-ক্ষণ ধার্য করেন পরিবারের সদস্যরা। হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী মেয়েকে স্বর্ণালঙ্কার, ঘরসজ্জার সরঞ্জমাদি কেনাসহ বরযাত্রী ও আত্মীয়স্বজন মিলে প্রায় ৪০০ মানুষকে অ্যাপায়নের আয়োজন করছেন রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী।
রূপলালে মেয়ে নূপুর রবিদাস বলেন, আমার বিয়ের আয়োজন হলেও মনের ভেতরে বাবা হারানোর কষ্ট রয়ে গেছে। আমার বাবার হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। আমি তারাগঞ্জ সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত। ছোট বোন রুপা স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। ছোট ভাই জয় রবিদাস তারাগঞ্জ ওয়াকফ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র। আমিও পরের ঘরে চলে যাচ্ছি, কী হবে আমাদের পরিবারের? এই দুশ্চিন্তা মাথায় থেকেই যায়।
আরও পড়ুন : ভোলায় বিএনপি-বিজেপি পাল্টাপাল্টি শোডাউন, বিজেপি অফিস ভাঙচুর
রূপলালের ছেলে জয় রবিদাস বলেন, বাবা নেই, বোনের বিয়ের পুরো কাজটা আমাকেই করতে হচ্ছে। অনেক টাকা-পয়সার দরকার। হাট থেকে তিনটা খাসি কিনেছি। জামাই বাবুকে উপহার দেওয়ার জন্য, ঘরসজ্জার সরঞ্জাম কিনেছি। এ ছাড়া স্বর্ণের আংটি, চেইন ও চুড়ি দিতে হচ্ছে। বোনের বিয়ে বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনসহ কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।
রূপলালের স্ত্রী ভারতী রবিদাস বলেন, আমার ভাস্তি জামাই প্রদীপ রবিদাস ছিলেন পরিবারের অভিভাবকতুল্য একজন মানুষ। নূপুরের বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিক করার জন্যই ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আমার স্বামী ও জামাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। আমি ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিশাহারা। মেয়ে নূপুরের বিয়েতে অনেক টাকা লাগছে। ধার-দেনা করে বিয়ে পার করতে হচ্ছে। সহযোগিতা পেলে উপকার হতো।
আরও পড়ুন : ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের নিজ কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান আমীর খসরুর
চলতি বছরের গত ১০ আগস্ট রূপলালের বাড়িতে মেয়ে নূপুরের বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিক করার অনুষ্ঠান ছিল। সেই আয়োজনে থাকার জন্যই মিঠাপুকুরের বাসিন্দা জামাই প্রদীপ রবিদাসকে রূপলাল তার বাড়িতে ডাকেন। কিন্তু ৯ আগস্ট রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলার বুড়ির হাট এলাকার বটতলার মোড়ে চোর সন্দেহে রূপলাল ও প্রদীপকে মারধর করে এবং পরে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে রূপলালের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত প্রদীপ পরদিন ১০ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
আরও পড়ুন : বাসদের ২২ নেতাকর্মী আটক
মন্তব্য করুন