অবকাঠামোকে প্রাধান্য না দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাসযোগ্যতা, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিতাকে প্রাধান্য দিলে ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়বে বলে মত দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
ঢাকাকে টেকসই ও বাসযোগ্য করতে বিগত বছরগুলোতে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নেওয়ার পরেও বাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবস্থান বারবার কেন নিচের সারিতেই পাওয়া যাচ্ছে, সেটার সঠিক কারণ নীতিনির্ধারকদের খোঁজে বের করে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করে তারা।
শনিবার (২৪ জুন) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০২৩-এর বাসযোগ্যতা সূচকে ১৭৩ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬তম, যা গত বছরের মতো নিচের দিক হতে সপ্তম স্থানে আমাদের অবস্থান নির্দেশ করে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
‘এই অবস্থান থেকে আমরা উন্নতি না করতে পারলে ঢাকায় বসবাস করা দেড় কোটি মানুষ, যারা আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ এবং তাদের জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন অর্জিত হবে না। একই সঙ্গে ঢাকার আবাসযোগ্যতার পাশাপাশি অস্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সারা দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়ন এর জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ানোর উপক্রম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে আমরা বিগত সময়ে বড় ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কম গুরুত্ব দিয়েছি নগর সুশাসন, সেবা সংস্থাগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যকর সমন্বয়, সেবা সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, উন্নয়ন পরিকল্পনায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলোতে।
‘একই সঙ্গে নাগরিক পরিষেবা ও পার্ক-খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার প্রবেশগম্যতা, নগরের উন্নয়নে এলাকাভিত্তিক সাম্যতা, পরিবেশ সুরক্ষা ও জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য না দিলে ঢাকার বাসযোগ্যতার তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করে আইপিডি। পাশাপাশি ঢাকার যানজট এবং বায়ু, পানিসহ পরিবেশদূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাশ্রয়ী, কার্যকর ও টেকসই সমাধান বের না করতে পারলে ঢাকা বাসযোগ্য হবে না।’
আইডিপির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ঢাকার অবাসযোগ্যতার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা ও জনঘনত্বের দায় আছে, এটা অনেকাংশে সত্য। তবে ঢাকার ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী অভিগমনের হার কেন কমানো যাচ্ছে না, আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনুসৃত বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন কেন এতদিনেও করা গেল না, সেই উত্তর নীতিনির্ধারকদেরই দিতে হবে। একইসাথে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন ও কার্যকর বাস্তবায়ন না করা গেলে ঢাকায় যতই অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হোক না কেন, ঢাকার বাসযোগ্যতার তেমন একটা উন্নতি হবে না বলে মনে করে আইপিডি।’
মন্তব্য করুন