

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষের গুঞ্জনের প্রেক্ষাপটে কড়া বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নয়, ধানের শীষই মুখ্য।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, আজ আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়তো এমনও হতে পারে, তোমার এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে, হয়তো তুমি একজনকে পছন্দ করতে, সে হয়তো পায়নি; যে পেয়েছে তার সঙ্গে হয়তো তোমার সম্পর্ক আছে একটু কম। ভাইরে, তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছ না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছ।
এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ, এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রতিটা পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো, এগুলো আমরা শুধু পরিকল্পনার মধ্যে রাখব না, জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এগুলোকে আমরা যেকোনো মূল্যে ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন করব। আমাদের আজকের প্রতিজ্ঞা, আজকের কর্মপন্থা হলো, আমাদের এই পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গেই আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করব। এটাই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী দুই মাসের কাজ। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সমর্থন নেওয়া ও সমর্থন জোগাড় করার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
খাল খনন, বায়ুদূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারা দেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতা-কর্মীদের তা জনগণের দোরগৌড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
একটি ইসলামি দলকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ১৬ বছর ধরে ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’-এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি। দুঃখজনক হলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে, সেটির বোধহয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়, এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে; মতামত দেয়ার অধিকার তার আছে, বক্তব্য দেওয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু বিশেষ একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই । কেন নেই? বিগত যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, কেন সেই আন্দোলন করেছি? কারণ সেই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কি মরে যাচ্ছে, তার কোনো জবাবদিহিছিল না। একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই সমাজে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড এ দেশের জনগণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের মানুষ। একজন গৃহবধূ ৫ আগস্টের সেই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড; মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র দোকানদার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সিএনজি চালক, বাসের হেলপার, ছাত্র, জনতা, মাদ্রাসার ছাত্র, ইউনিভার্সিটি-কলেজ-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। ওই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছোট ছোট শিশুরা; ওই আন্দোলনে ৬৩ জন শিশু মারা গেছে।
তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইমিডিয়েট ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের সামনের দিনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে তোমাদের উপরে। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে এ দেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে একটি ভয়াবহ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। আমরা যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি, দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী সাইমুম পারভেজ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।
মন্তব্য করুন