বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখনো বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে একজন আবদুল হকের ২৪ বছর বয়সী ছেলে আবু তালহা। ছেলের জন্য ঢাকা মেডিকেলের সামনে অপেক্ষারত আবদুল হক বলেন, ‘আমি অন্তর থেকে বুঝতে পারছি যে, আমার ছেলে জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে।’
গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলের কাছে একটি হোটেলে ছোট ছেলের সাথে স্ত্রীকে রেখে আবদুল হক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার জন্য। খবরের অপেক্ষা করা ছাড়া আসলে উপায়ও ছিল না। আগুনে পুড়ে যাওয়া যে চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের পরিচয় ডিএনএ টেস্ট না করে খালি চোখে নিশ্চিত করা আসলে অসম্ভব। সবকটি মরদেহই ‘পুড়ে কয়লা’ হয়ে গেছে বলে জানান মর্গের কর্মীরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় ফরিদপুরের আবদুল হক ঠিক নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন না। ছেলে আবু তালহার বিষয়ে কথা বলার সময় একটু পরপর খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। জীবনে মনে হয় কোনো বড় পাপ করেছি, না হলে আমার নিষ্পাপ ছেলে কেন এত কষ্ট পেয়ে মারা গেল বলেও আর্তনাদ করছিলেন আবদুল হক। ছেলের ছোটকালের গল্প, তার পছন্দের খাবার, বাবা-মা’র সাথে খুনসুটির কথা বলতে বলতে কখনো মুখে স্মিত হাসি চলে আসছিল, আবার পর মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন তিনি।
আবদুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আবু তালহা সৈয়দপুরের আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ফরিদপুর থেকে ঢাকায় চলে এসেছে তার পুরো পরিবার।
ট্রেনে আগুনের ঘটনায় আবু তালহাসহ কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তারা মারা গেছেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত না। তাদের মরদেহও পাওয়া যায়নি, পরিবারও তাদের সাথে গতকাল রাতের পর থেকে যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে আবু তালহা’র বাবা আবদুল হক বলেছেন, ‘আমি অন্তর থেকে বুঝতে পারছি যে, আমার ছেলে জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে।’
তথ্যসূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন