ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদের ছুটিতে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। তবে ঈদ উৎসবেও কিছু মানুষের জীবনে মেলে না ছুটি, মেলে না অবসর। পেশাগত দায়িত্ব বা জীবিকার তাগিদে তাদের থাকতে হয় তৎপর। কাছের মানুষরা যখন ঈদের আনন্দে ব্যস্ত, তখন পেশাগত দায়িত্ব ও জীবিকার তাগিদে উৎসব আনন্দের ঊর্ধ্বে কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনেও।
ঈদে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ শেকড়ের টানে বাড়ি গেলেও কিছু মানুষ রয়ে গেছেন এই শহরে। যারা যেতে পারেননি, তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শ্রমজীবী। এদের কেউ রিকশা চালান, কেউ লেগুনা, কেউ বাস আবার কেউ সিএনজি চালান।
ঈদ সবার জন্য আনন্দের হলেও তাদের অনেকের মনেই আনন্দ নেই। অভাব তাদের আনন্দ অনেকটাই ফ্যাকাসে করে দিয়েছে। তাই তারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাকায় রয়ে গেছেন। বাড়তি কিছু আয়ের জন্য তারা রাস্তায় নেমেছেন। যারা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছেন, তাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন তারা। এ সময় আবার অনেকের রিকশায় করে ফাঁকা নগরী ঘুরে দেখার স্বাদ জাগে। সেই স্বাদও মেটান তারা। আর এভাবেই কাটছে শ্রমজীবী মানুষের ঈদ আনন্দ।
ভোলার মহিউদ্দিন ঢাকায় রিকশা চালান। ভোলায় কৃষি কাজ করলেও এখন এলাকায় কাজ নেই। সংসার চালাতে তো টাকার প্রয়োজন, এলাকায় উপার্জন করতে না পারায় ঢাকায় এসে রিকশা চালান। পরিবারে মা, স্ত্রীসহ দুই জন সন্তান আছে। দুই সন্তানকেই তিনি পড়াশুনা করান। তাই সন্তানদের লেখাপড়াসহ পরিবারের খরচ চালাতে ঢাকায় এসে রিকশা চালান তিনি।
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালের সামনে।
তিনি বলেন, গত এক মাসে যা আয় করেছি সব পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। স্ত্রীকে বলেছি, নিজের জন্য শাড়ি, সন্তানদের জন্য জামা-কাপড়, মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে করে এখন যদি বাড়ি যাই তাহলে কমপক্ষে একসপ্তাহের নিচে রিকশা পাব না মালিকের কাছ থেকে। আর একসপ্তাহ রিকশা চালাতে না পারলে এই মাসের বাকি দিন গুলো পরিবারকে টাকা পাঠাতে পারব না। তাই এই ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। আর ঈদের দিন রিকশা চালালে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়।
সদরঘাটের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী বিক্রমপুরের সোহেল। ঈদের আগের দিন রাতেও নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমাদের ঈদ নাই। আমাদের কাজটাই এমন। এ বছর ঈদে ছুটি পাই নাই। ছুটি নিলে মাসের বেতন থেকে টাকা কাটা যেত। তাই ছুটি নিইনি। এই মাসে খরচ দ্বিগুণ তাই ডিউটি করে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে কোরবানির ঈদে বাড়ি যাব। বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছি স্ত্রী ও মেয়েরা কেনাকাটা করেছে। এতেই আমার আনন্দ।
নোয়াখালীর ছেলে শাহবাগের চা দোকানি শুভ মিয়া। পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন আছে। চায়ের দোকান করতে করতে মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। পরিবারের সবাই পোশাক কিনেছে কিনা বা আরও টাকা লাগবে কিনা!
তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। ঈদ ও বৈশাখের ছুটি থাকবে আরও চার-পাঁচ দিন। শহরে মানুষ নেই। তবুও টুকিটাকি মানুষ আসছে। এখন বাড়ি গিয়ে বসে থাকলে আয় রোজগার হবে না। তখন পরিবার নিয়ে খাব কী? তাই ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে গ্রামে না থেকে বাড়তি কিছু আয় করার চেষ্টা করছি।
একইভাবে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে কেরানীগঞ্জগামী লেগুনার চালক আজমল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঢাকায় আমাদের পরিবার-পরিজন নেই। গ্রামে স্ত্রী-সন্তান আছে। তাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি। বসে থেকে কী করব। তাই ঈদের আগের রাতে গাড়ি নিয়ে নেমেছি। ভালোই আয় রোজগার হবে বলে মনে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন