কোরবানির ঈদে ৪৫ হাজার টনের বেশি বর্জ্য সরানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর হাজারের ওপর যান-যন্ত্রপাতি। দুই সিটি করপোরেশনেরই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান বলেন, ‘কোরবানির ঈদের বর্জ্য সরানোর জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। ছয় ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য সরানোর জন্য নতুন যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর আগের বছর আমরা ১৯ হাজার ৬০০ টনের বেশি বর্জ্য সরিয়েছিলাম আর তার আগের বছরও ২০ হাজার টনের মতো। তাই এবারও ২০ হাজার টনের বেশি বর্জ্য হতে পারে। সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৫ হাজার টন বর্জ্য সরানোর প্রস্তুতি রেখেছে বলে জানান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। তিনি বলেন, ‘গতবছর ৫ হাজার ৩৩২টি ট্রিপের মাধ্যমে ২১ হাজার ৭৯৩ দশমিক ৪৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ২০২২ সালে ৪ হাজার ৮৮০টি ট্রিপের মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২৬ দশমিক ৩৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। চলতি বছর ঈদের আগের দিন রাত ১১টা থেকে হাটের বর্জ্য সরানো শুরু হবে।’
এ ছাড়া কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ করা না হলে দক্ষিণ সিটির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯ ৯০০ ৮৮৮ ও ০২২২৩ ৩৮৬ ০১৪ নম্বরে ফোন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে দক্ষিণ সিটির প্রস্তুতি
নিজস্ব ৪ হাজার ৯৯৭ জন ও পিসিএসপি’র ৪ হাজার ৫০০ জন (প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন করে) মিলে মোট ৯ হাজার ৪৯৭ জন কর্মী বর্জ্য সরাবে। বর্জ্য সরাতে নিয়োজিত থাকবে ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি। সেগুলো হল- ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, কম্পেক্টর ৪৬টি, কন্টেইনার ক্যারিয়ার ৪৭টি, পে-লোডার ২৪টি, টায়ার ডোজার ১২টি, স্কিড লোডার ৮টি, ব্যাক হো লোডার ৪টি, পানির গাড়ি ৯টি, বুলডোজার ২টি, স্কেভেটর ৮টি, গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার ৩টি, ফর্ক লিফট ২টি, হাইড্রলিক ক্রেন ২টি, লং ট্রলি ২টি, প্রাইম মুভার ২টি, রেকার ১টি এবং জেড সাকার ১টি। এ ছাড়াও পিসিএসপি কর্তৃক ৭৫টি ওয়ার্ডে ১৫০টি মিনি ট্রাক এবং সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকিতে নিয়োজিত থাকবে আরও ৩০টি গাড়ি।
হাটের বর্জ্য সরানোর জন্য থাকবে ৭৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী (১১টি হাটে গড়ে ৭০ জন করে)। আর একাজে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে-লোডার ও ১১টি টায়ার ডোজার নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়াও জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি হাটে আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। এবং সংস্থার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাটের আইনশৃঙ্খলা তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে।পাশাপাশি ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার, ২২২ গ্যালন স্যাভলন (প্রতি গ্যালনে ৫ লিটার করে), ১ লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত বুধবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘গতবছরের মতো এবারও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ঈদের দিন যে বর্জ্য সৃষ্টি হবে, সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারিত হবে। পরের দিন যে বর্জ্য সৃষ্টি হবে সেটাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারিত হবে। আর যেহেতু চাঁদরাত থেকে হাটে পশুর সংখ্যা, হাটের পরিধি ও বিক্রি কমে যায় তাই চাঁদরাতের মধ্যরাত থেকেই আমরা হাটের বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করব। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নিজস্ব অর্থায়নে ইতোমধ্যে ১০ টন সক্ষমতার ২৫টি ড্রাম্প ট্রাক ও ১০টি পে-লোডার কিনেছি। আরও ১৫টি ড্রাম্প ট্রাক কেনা হচ্ছে।’
বর্জ্য অপসারণে ডিএনসির প্রস্তুতি : কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ৫২০টি বিশেষায়িত যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ডাম্প ট্রাক ৮৫টি, পে-লোডার-২১টি, পানির গাড়ি ১৮টি, টায়ার ডোজার ২টি, স্কিড লোডার ৫টি, পিক-আপ ১৪০টি, কন্টেইনার ক্যারিয়ার ৪৫টি, কম্পোক্টর ১২১টি, খোলা ট্রাক ৪৩টি।
ডিএনসিসির ২৮টি ওয়ার্ডে নিজস্ব ২ হাজার ৩৯৪ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৩২৩ জন, ভ্যান সার্ভিস কর্মী ৪ হাজার ২০০ জন, পিকআপে নিয়োজিত কর্মী ৪২০ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৯ হাজার ৩৩৭ জন কর্মী নিয়োজিত থাকবে।এ ছাড়া, ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ, এক লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ, ব্লিচিং পাউডার ২ হাজার ৬৮০ বস্তা (২৫ কেজি বস্তা), স্যাভলন ৯০০ক্যান (প্রতি ক্যান ৫ লি.), টুকরি ৭ হাজার টুকরি ও ১ হাজার ২৫০ লিটার ফিনাইল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত বুধবার গাবতলীতে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন ৩২টি ডাম্প ট্রাক এবং আটটি আধুনিক কম্প্যাক্টর ট্রাকের সংযোজন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর সবার চেষ্টায় উত্তর সিটি করপোরেশন ৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এবার আমাদের টার্গেট ছয় (৬) ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসরণ করা। ৪০টি ট্রাক যুক্ত হওয়ায় এই বছর বর্জ্য অপসারণে আরও গতি বাড়বে।’
মন্তব্য করুন