দীর্ঘ বছর চট্টগ্রামের রাউজান ঘিরে ছিল তার সাম্রাজ্য। অহংকার, দাম্ভিকতার কারণে খোদ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরাই ছিল তার ঘোর বিরোধী। বহু গুম, খুনসহ নানা স্পর্শকাতর অভিযোগ চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিমের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম-৬ আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে হেলিকপ্টার যোগে। এ সময় তার হাতে ছিল হাতকড়া, পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র্যাবের একটি হেলিকপ্টারে করে তাকে চট্টগ্রাম আনা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হয় পুলিশের একটি দল। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে পুলিশ লাইনের মাঠে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেডিয়াম থেকে একটি হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর সকালে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বিজিবির হাতে আটক হন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান জানান, ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ৬-৭টি মামলা রয়েছে। সেখানের সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে তাকে হাজির করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপারের কাছে চিঠি আসে। সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে হেলিকপ্টার দিয়ে চট্টগ্রামের জেল সুপারের কাছে ফজলে করিম চৌধুরীকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সুপার তারেক আজিজ কালবেলাকে বলেন, বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্স মাঠে আনা হয়েছে। সেখান থেকে জেলা ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপারকে একটি লিখিত চিঠি দেন পুলিশ সুপার (ডিএসবি)। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে আটক হাজতি সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিন ধার্য্য ছিল। এ জন্য তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছাতে পুলিশ এস্কর্টের জন্য আবেদনপত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া স্বাপেক্ষে পরবর্তী দিন নির্ধারণপূর্বক অবহিত করার বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়।
এর পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আরেকটি চিঠি লেখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শহিদুল ইসলাম। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ দল চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারকে (ডিএসবি) চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ স্কট না পাওয়ায় ফজলে করিমকে ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করার জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো যায়নি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে। বর্তমানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও রাউজানে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।
মন্তব্য করুন