চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ মামুন (২৮)। কথা ছিল মাস খানেকের মধ্যে বিয়ের জন্য দেশে ফিরবেন। তিনি ঠিকই দেশে ফিরলেন, তবে জীবন্ত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।
জানা গেছে, ওমানে একটি ভবনের তিন তলা থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল মামুন। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সাহেবনগর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।
শ্রমিক হিসেবে কাজ করা মামুনের ভিসা না থাকায় মরদেহ দেশে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার বিশেষ ব্যবস্থায় তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং একইদিন দুপুর ২টার দিকে সাহেবনগর হাজী বাচন আলী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বুধবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে তার বসতঘরে দেখা যায়, নিহত মামুনের মা আনোয়ারা বেগম সন্তানের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে সন্তানের বিয়ে করতে আসার কথা বলছিলেন। অন্যদিকে তার আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
তার স্বজন সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী রুস্তম জানান, ওমানে নিহত মামুন দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ সংকটে তা আর বাড়াতে পারেননি। গত ১০ আগস্ট ওমানের মুবালা সানাইয়া ৮ নম্বর এলাকায় তার আবাসস্থলের একটি ভবনের তিনতলা থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় মামুন। তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মামুনের বাবা নুরুল ইসলাম জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সন্তান ছিল মামুন। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে গত ১০ বছর আগে অল্প বয়সে ওমানে যায়। তার জন্য বউ ঠিক করে কেনাকাটাও শেষ পর্যায়ে ছিল। সে দেশে আসলে তারিখ নির্ধারণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না জানিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহতের অপর স্বজন মো. ইকবাল হোসেন বলেন, মাসখানেকের মধ্যেই বিয়ে করার জন্য তার দেশে আসার কথা ছিল। তার বিয়ের জন্য কনে ঠিক করা হয়ে গিয়েছিল। বর ও কনে পক্ষের মধ্যে বিয়ের দিন তারিখও অনেকটা ফাইনাল। অন্যদিকে নতুন বউয়ের জন্য স্বর্ণসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন মামুন। ১৫ দিন পর দেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এই প্রবাসী। কিন্তু বিয়ে করতে তার আর দেশে আসা হলো না। তার আগেই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এই প্রবাসী।
মন্তব্য করুন