চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আবদুর রহমান নামে এক প্রধান শিক্ষককে জনসম্মুখে রশি দিয়ে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
মারধরের শিকার আবদুর রহমান বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বুচির পাড়ার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শামসু মাস্টারের বাড়ির শামসুল ইসলামের পাঁচ ছেলে মো. হানিফ (৪৫), মো. হান্নান (৪২), মো. সোহাগ (৪৫), মো. ইকবাল (৩৮), আবু বক্কর (৫৫) ও আবু বক্করের ছেলে মুসলিম উদ্দিন হিরু (২৬)।
জানা যায়, দীর্ঘদিন আগে শিক্ষক আবদুর রহমান পরিবারের সঙ্গে আবু বক্করের পরিবারের জায়গা সংক্রান্ত একটি বিরোধ ছিল। সে সময় সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয়। শিক্ষক আবদুর রহমানের ভাই-বোনরা আবু বক্করের পরিবারকে কিছু জায়গা বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষক আবদুর রহমান তার অংশ বিক্রি করেননি।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে আবদুর রহমানকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদার হাট বাজারে অভিযুক্ত মো. হানিফ তার মুদির দোকানে ডেকে নিয়ে যান। পরে সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অভিযুক্তরা মিলে শিক্ষককে হানিফের দোকানের একটি খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধেন। এরপর চর-থাপ্পড় ও মারধরের মাধ্যমে হেনস্তা করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান।
ভুক্তভোগী আবদুর রহমান বলেন- হানিফ, হান্নান, সোহাগ, ইকবাল, বক্কর ও হিরু সবাই মিলে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে হিরু ও হানিফ মিলে আমার তলপেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে তারা সবাই মিলে আমাকে জনসম্মুখে দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রথমে হেনস্তা করেন। পরে তারা আমাকে ব্যাপক মারধর করে।
তিনি বলেন, মামলা দায়ের করলে তারা আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
পরে অপর এক অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিন হিরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, শিক্ষক আবদুর রহমানের সর্বমোট ১২ জন ভাইবোন। তারা আমাদের কাছে কিছু জায়গা বিক্রি করেছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে আমাদের রেজিস্ট্রি দিয়েছে। কিন্তু আবদুর রহমান ওই জায়গায় তার অংশটুকু বিক্রি করেননি। তবে তিনি তার মূল জায়গা থেকে কয়েকগুণ বেশি দখল করে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে তাকে ১০ থেকে ১৫ বার বলেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি কানে নেননি। ঘটনার দিন তিনি দোকানে এসেছিলেন, তখন এ বিষয়ে আমার বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। আমার বাবা আঘাত পাওয়ার পরে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখি। পরে তার সঙ্গে আমাদের হাতাহাতি হয়।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক আবদুর রহমান বাদী হয়ে রোববার (২৯ জুন) বিকেলে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে এক শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি আমিও ফেসবুকে দেখেছি। ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়।
মন্তব্য করুন