সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বৈরাচার হটাতে পেরেছি কিন্তু রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি : হাসনাত

চট্টগ্রামে এনসিপির সমাবেশে বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রামে এনসিপির সমাবেশে বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : কালবেলা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে প্রতিরোধের শহর, লড়াইয়ের শহর। আমাদের রাজনীতির সূচনা করেছি এই শহর থেকে। আমরা চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় গিয়েছি। আমরা সবাই মিলে সফলভাবে স্বৈরাচারকে হটাতে পেরেছি কিন্তু সফলভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। আমাদের রাষ্ট্র গঠনে মনোযোগ দিতে হবে।

রোববার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় এনসিপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, আমাদের অতীতে যারা শাসন করেছে, তারা জানতো দিনশেষে তারা দেশে থাকতে পারবে না। তারা হয়ত ভারতে পালাবে, হয়ত আমেরিকায় পালাবে, হয়ত লন্ডনে পালিয়ে যাবে। সেজন্য তারা আগে থেকেই তারা তাদের ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। তারা তাদের সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। থার্ড হোম বানিয়েছে। আমরা যারা বাংলাদেশে থাকবো তাদের বাংলাদেশকে নিয়েই থাকতে হবে।

হাসনাত বলেন, আমাদের অতীত প্রজন্ম আমাদের জন্য কিছু রেখে যায় নাই। তারা আমাদের জন্য ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে গেছে। তারা আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে গেছে। আমাদের মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ দিয়ে গেছে। আমরা যারা এ প্রজন্মের আছি, আমাদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। এই সব সমস্যার সমাধান আমাদের করতে হবে। এই তরুণ প্রজন্মকে অর্থ দিয়ে কেনা যায় না, লোভ দিয়ে কেনা যায় না। হাসিনা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারে নাই। এই তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে ইতিহাস রচনা করা হবে।

হাসনাত আরও বলেন, আমরা বর্তমানে যে কার্যক্রম করব, সেগুলোর ফল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভোগ করবে। বর্তমানের কাঠগড়ায় যেভাবে অতীতকে দায়বদ্ধ করি, বর্তমানে আমরা দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় আমরা দায়বদ্ধ হবো। সে জন্য আমাদের একটা ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র লাগবে। নীতিনির্ভর রাষ্ট্র লাগবে৷ আমাদের তরণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যে ফাটল তৈরি করতে চাইবে, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ এনসিপি নেতারা সত্য উন্মোচন করেছেন বলেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। বাঁশখালীতে আমাদের সংগঠকের ওপর হামলা হয়েছে, ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের বলতে বাধা দিলে, বাঁধবে লড়াই। আর এই লড়াইয়ে জিততেই হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম। কিন্তু এই চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অপশক্তির নজর চট্টগ্রামের দিকে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হলে সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এই চট্টগ্রামকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।

সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের লড়াই দ্বিতীয় বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। সেই নতুন বাংলাদেশ হবে ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ ও জবাবদিহিতার। নতুন বাংলাদেশে আমরা লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষকে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বিল্ডিং দেখিয়ে এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দশ হাজার টাকার প্রজেক্ট কোন ফাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকার হয়ে যায়, বাংলাদেশের মানুষ তার জবাব চায়। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ চাই, সেখানে যে কোন প্রজেক্টের হিসাব জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘসময় ধরে নাগরিক অধিকার, সেবা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির শিকার হয়, শিক্ষাবোর্ডে গেলে, আইডি কার্ড পরিবর্তন করতে গেলে থানায় গেলে, সচিবালয়ে গেলে হয়রানির শিকার হয়। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জায়গা। এখানে কোন বিভেদ থাকবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিন্তু বিগত সময়ে ধর্ম পালন করতে দেয় নাই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বাংলাদেশের সকল জায়গায় আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। নীতির জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন।

এই বাংলাদেশে যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, এজন্য বিচার আর সংস্কার প্রয়োজন। আমরা এই চট্টগ্রাম থেকে স্লোগানের মাধ্যমে জানান দিতে চাই, এই মুহূর্তে দরকার বিচার আর সংস্কার।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা জোবাইরুল হাসান আরিফ, ইমন সৈয়দ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, যুবশক্তির আহ্বায়ক এড. তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে সমাবেশে শুরুর আগে দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল ও স্লোগানে যোগ দিতে দিতে সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এদিকে এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সমাবেশ ঘিরে পুলিশের স্পেশাল ইউনিট সোয়াট সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারের কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর ঘটনায় চট্টগ্রামে দলটির সমাবেশকে সামনে রেখে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ ‘মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’, অনুষ্ঠানমালা থাকছে সারা দিন

সরকারের অভিলাষ নিয়ে আমরা শংকিত : চরমোনাই পীর

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে : লুৎফর রহমান

পিনাকী ভট্টাচার্যসহ বেশ কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির

গণমিছিলে গিয়ে বিএনপি নেতার আকস্মিক মৃত্যু

বাহাত্তরের সংবিধানে সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি : নাহিদ

খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু

আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছে : নাহিদ 

সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কী বললেন মির্জা ফখরুল

এনআইডি আবেদনে ফের সুযোগ

১০

সীমিত হতে পারে টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা!

১১

মাদ্রাসার শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা, গণপিটুনিতে হত্যাকারী নিহত

১২

পল্টন মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণ

১৩

একাত্তরের মতো চব্বিশ নিয়ে যেন চেতনা ব্যবসা না হয় : সালাহউদ্দিন আহমেদ

১৪

গাজীপুরে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে হত্যা

১৫

ঘরে ঘরে জ্বর-কাশি, রোগের কারণ ও বাঁচতে করণীয়

১৬

ডেঙ্গু ও করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

১৭

সাত বিয়ে করা সেই রবিজুল গ্রেপ্তার

১৮

মাথা ও হাত-পা কাটা তরুণীর মরদেহ উদ্ধার

১৯

দুই দাবি বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি

২০
X