প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই উদ্বোধনের পর যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ে ঢাকা থেকে নন স্টপ সার্ভিসে চট্টগ্রাম লেওয়ে স্টেশন হয়ে কক্সবাজার যাত্রা করলেও সেই ট্রেনেই উঠতে পারছেন না বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী। আগামী ১ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে রেল যাবে পর্যটক শহর কক্সবাজারে। এ জন্য বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়েটি চলবে নন স্টপ সার্ভিসে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রীরা টিকিট কেটে রেলে উঠতে না পারলেও ঢাকা বা কক্সবাজার থেকে টিকিট সংগ্রহকারীরাই চট্টগ্রাম স্টেশনে ওঠানামা করতে পারবেন। রেলটি চট্টগ্রাম স্টেশনে ২০ মিনিটের জন্য অপারেশনাল বিরতি করবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও চলছে। অন্যদিকে মাঝপথে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অপারেশনাল বিরতি রাখলেও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট কেটে যাত্রী ওঠানামার কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ট্রেন ভ্রমণ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ থেকেই যাচ্ছে। রেলওয়ে প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্তাদের এগুয়েমী সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সাবাজার ট্রেনে যাত্রী ভ্রমণের সেবা থেকে প্রথম যাত্রায় বঞ্চিত হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী। এতে চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণির মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেনটি চট্টগ্রামে যাত্রা বিরতি এবং যাত্রী পরিবহন না করলে বিভিন্ন পেশাজীবী, ছাত্র সংগঠন এবং নানা শ্রমিক সংগঠন আন্দোলনে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ একাধিক শ্রেণিপেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাত্রী ট্রেনের প্রথম যাত্রায় চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে ট্রেন ভ্রমণ করাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই কক্সবাজার রেললাইন উপহার নিয়ে কাজটা করেছেন, শুধু ঢাকার যাত্রীর জন্য নয়। রেলের এ ধরণের সিদ্ধান্ত পরির্বতন না করলে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ একত্রিত হয়ে প্রথম যাত্রায় রেলস্টেশনে অবস্থান করব।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী প্রথম যাত্রায় কক্সবাজার যেতে চান। সে ক্ষেত্রে রেল প্রশাসনের কাজে অনুরোধ জানাব, সেই ব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি করার জন্য। চট্টগ্রাম রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ প্রথম যাত্রায় ট্রেন ভ্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটা থেকে কেনো চট্টগ্রামবাসী বঞ্চিত হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীর কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করছে প্রশাসনের এক শ্রেণি।
শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা কামাল পারভেজ বাদল বলেন, চট্টগ্রামবাসী প্রথম যাত্রায় কক্সবাজার ট্রেনে ভ্রমণ করতে না পারলে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে অবস্থান করব। আমাদেরও ইচ্ছা আছে প্রথম যাত্রায়ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সাধারণ যাত্রী ট্রেন ভ্রমণ করবেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নন স্টপ সার্ভিস ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত চালু হচ্ছে ১ ডিসেন্বর থেকে। এর পর পর্যায়ক্রমে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন উদ্বোধন করেন। ওই দিনই আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার রেল চলাচলের কথা ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় রেল লাইনটি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা উন্নতমানের নতুন ১৮টি কোচ সংবলিত আন্তঃনগর ট্রেনটি চালানো হবে এই রুটে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এসিস্ট্যান্ট চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্ট মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল পথে প্রাথমিকভাবে এক জোড়া নন স্টপ রেল চলাচল করবে। চট্টগ্রাম স্টেশনে ২০ মিনিটের অপারেশনাল বিরতি থাকবে। বিরতিকালীন সময়ে যাত্রীরা উঠা-নামা করতে পারবেন। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত কোচ দিয়ে ৮১৩ ও ৮১৪ নম্বরের এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হবে। এটির আসন ৭৮০টি। সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ট্রেনটি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে পর দিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছাবে। ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই যাত্রা পথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে অপারেশনাল বিরতি করবে। একইভাবে দুপুর ১টায় কক্সবাজার ছেড়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রেল পথের দূরত্ব ৫৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।
মন্তব্য করুন