আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এবার চট্টগ্রামে আগুন

মিলাদ শেষ হতেই রহস্যজনক আগুনে পুড়ল নির্মাণাধীন হিমাগার

আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। ছবি : কালবেলা
আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। ছবি : কালবেলা

ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১০টা ৪০ মিনিট। চট্টগ্রামের বাকলিয়া এক্সেস রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনে মিলাদ শেষে সবাই অপেক্ষা করছিলেন মিষ্টি খাওয়ার আশায়। কিন্তু ভবনের চার তলায় হঠাৎ শোরগোল শুরু হয়। আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে নিচে নামতে থাকেন শ্রমিকরা। তারপর যে যার মতো ছুটে বের হয়ে আসে ওই অগ্নিকুণ্ড থেকে। রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় ৪৬টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর দিন ঠিক এভাবেই চট্টগ্রামে আগুনের হাত থেকে রেহাই পান কয়েকজন শ্রমিক। আগুনে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও চারতলা ভবনটিতে থাকা বেশকিছু নির্মাণসামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা এ ভবনে আগুন লাগার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে রহস্য তৈরি হচ্ছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে চারতলা ভবনটিতে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। দুপুর ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পুরোটিই কোল্ডস্টোরেজ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের অধীনে এটি নির্মাণ হচ্ছে।

ভবন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যেখানে সাত তলা সমান প্রায় ৭০ ফুট উঁচু একটি হিমাগার নির্মাণের কাজ চলছে। এখনো পর্যন্ত চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সকালে ভবনটিতে মিলাদের আয়োজন ছিল। মিলাদ শেষে অতিথিদের বিদায় দিয়ে সকাল পৌনে ১১টার দিকে সবাই মিষ্টি বিতরণের জন্য নিচে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ভেতর থেকে কয়েকজন আগুন আগুন বলে নিচে নেমে আসে। মুহূর্তেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারপাশ। খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের একধিক দল দ্রুত ছুটে আসে তবে হিমাগারে জানালা কিংবা ফোকর না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে এবং ভেতরে ককশিট ও প্রচণ্ড দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ কালবেলাকে বলেন, ভবনের কাজ ২০২২ সালে শুরু হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। আর ৮ থেকে ১০ মাস কাজ হলেই এটি ব্যবহার শুরু হতো। বিভিন্ন রকমের তরকারি ও জিনিসপত্র রাখার হিমাগার হিসেবে এটি তৈরি করা হচ্ছে। যখন আগুন লাগে তার আধা ঘণ্টা আগে থেকেই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। তা ছাড়া আগুন লাগার মতো কোনো কিছুই ছিল না। কীভাবে আগুন লেগেছে এখনো বুঝতে পারছি না। যেহেতু হিমাগারের কাজ নির্মাণাধীন, কয়েকজন শ্রমিক এখানেই থাকতেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ার কারণে কাজের চাপও কম ছিল। শ্রমিকরা কাজ শেষে নিচে খাবার খেতে গিয়েছিল। মিলাদ শেষে অতিথিদের বিদায় জানিয়ে আমরা মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় কয়েকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই বেরিয়ে আসে।

দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, চারতলার ওই নির্মাণাধীন ভবনটি চারপাশে একেবারেই কালো হয়ে গেছে। ভবনের নিচেই রাখা হয়েছে বেশ কিছু ককশিট। বাইরে থেকে ভবনটির কোনো জানালা দেখা যায়নি। ভেতরে লোহা ও বিভিন্ন ধরনের শিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অবকাঠামো। এই অবকাঠামো তৈরিতে কাঠ, প্লাস্টিক ও ককশিটের ব্যবহার হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই তীব্র ধোঁয়া সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের সূত্রপাতের পরপর তীব্র ধোঁয়া দেখে আশপাশের বাসিন্দারাও ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ধোঁয়ার তীব্রতার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘ছুটির দিন থাকায় হিমাগারের পাশে আমরা সকালে খেলতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ পোড়া গন্ধ আসতে শুরু করে। মুহূর্তেই দেখি ওই হিমাগারের ভেতরে আগুন লেগেছে। কিছু সময়ের মধ্যে চারদিকে কালো হয়ে যায়। পাশেই আমাদের বাসা। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে সবাইকে সতর্ক করি।’

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, পুরো ভবনটা বদ্ধ থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। তা ছাড়া ওই ভবনে থাকা ককশিটের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং চারপাশে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত ও কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নরসিংদীতে স্পিনিং মিলের তুলার গোডাউনে ভয়াবহ আগুন

মা-বাবা ও স্ত্রীর নামে কসম করলে কী হয়? জানালেন বিশেষজ্ঞ আলেম

৭ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

ঢাকা-৮ আসনে সাদিক কায়েমের প্রার্থিতার খবরে যা বলছেন হাদি

নির্বাচন কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না : সাইফুল হক

মৃত আত্মীয়কে দেখে ফেরার পথে সড়কে লাশ হলেন শাশুড়ি-পুত্রবধূ

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ড. ওবায়দুল ইসলামের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল

খালেদা জিয়ার আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় কোটি জনতা : অপর্ণা রায়

ঢাকায় রুশ গণ-কূটনীতির শতবর্ষ উদযাপন

ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ : মুফতি মোস্তফা কামাল

১০

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

১১

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

১২

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্ট

১৩

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

১৪

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

১৫

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

১৬

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

১৭

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

১৮

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

১৯

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

২০
X