কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নারীর মনোসামাজিক ক্ষমতায়ন বাড়লে খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত হতে পারে

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

নারীদের মানসিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন বাড়লে খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত হতে পারে—এমন প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ ৮টি দেশের ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ গবেষণায়।

এখানে ‘মনোসামাজিক ক্ষমতায়ন’ বলতে বোঝানো হয়েছে একজন মানুষের চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণ তার সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের আত্মবিশ্বাস, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সামাজিক অবস্থান শক্তিশালী হলে পরিবার ও সমাজে খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এই গবেষণায় ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন—এই বিষয়গুলোকে একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। এমন প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হয়েছে, যেগুলো সহজে বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। গবেষণার পদ্ধতিতে নারীর মানসিক শক্তির পাশাপাশি নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলোও যুক্ত ছিল।

‘ইমপ্রুভিং ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি বাই ইনহ্যান্সিং উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে নেদারল্যান্ডসের ডাচ রিসার্চ কাউন্সিল।

এই গবেষণায় অংশ নেয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের হিউম্যানিটারিয়ান হাব, ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স, নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিঙ্গেন ও ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গ্রোনিঙ্গেন, ইথিওপিয়ার হারামায়া ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই), জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব পাসাউ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ইথিওপিয়ান মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনস।

সম্প্রতি ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন হিউম্যানিটারিয়ান হাবের অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট সায়রা পারভীন জলি। তিনি ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের দাবি কর্মসূচির নারী ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে করা বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রভাব নিয়েও কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগীরা আলোচনা করেন—সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে কোন মানসিক ও সামাজিক বিষয়গুলো কাজ করে। তারা আরও আলোচনা করেন, মনোসামাজিক উদ্যোগ এবং পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) কর্মসূচির প্রভাব আলাদা করে কীভাবে বোঝা যায়।

আলোচকরা বলেন, ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে নারীদের পেশা, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান এবং লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে এসব বিষয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তুলে ধরা হয়।

ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ-এর ডিন ড. লরা রেইখেনবাখ বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

অনুষ্ঠানে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. জিনাত আরা বলেন, আজ যে মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে, সে-ই ভবিষ্যতে অপুষ্ট মায়েতে পরিণত হতে পারে। এই চক্র ভাঙতেই হবে।`

তিনি আরও বলেন, লিঙ্গসমতা শুধু নৈতিক বিষয় নয়, এটি ভালো স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার একটি কার্যকর উপায়।

আইসিডিডিআরবি’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, অপুষ্টি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা, জ্ঞান, আর্থিক সক্ষমতা ও মানসিক শক্তি দরকার। একই সঙ্গে তিনি স্বামীদের সম্পৃক্ততার গুরুত্বও তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, সরকার এসব গবেষণালব্ধ তথ্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে চায়। তিনি জানান, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার ২৫ বছরের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে।

ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ-এর প্রফেসর ড. কাওসার আফসানা বলেন, ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সফল করতে হলে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিকল্পনা করা খুবই জরুরি। এতে করে কার্যক্রম বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুতা দেখে পুকুরে নেমে পাওয়া গেল সাব্বিরের মরদেহ 

১১০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল চসিক

সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় আ.লীগ-যুবলীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার

তারেক রহমানের জন্য বাসভবন ও অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি

দিনেদুপুরে গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টা

মৃত্যুর আগে ‘বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি’ চান জহুরা বেগম

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নির্মাণে ব্যর্থতা রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয় : রাবি উপাচার্য

হাদিকে হত্যাচেষ্টা / কে এই ফিলিপ স্নাল, যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে প্রশাসন

বিজয় দিবসে চট্টগ্রামে রণাঙ্গনের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা

দেশের মাটিতে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসার সুযোগ নেই : ড. ইউনূস

১০

মাথায় গুলি লাগার পরও যেভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন মালালা

১১

মার্কিন গ্রিন কার্ডের সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক নারী

১২

আ.লীগ ভেবে বিএনপি নেতাকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

১৩

পরাজিত শক্তির সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হবে : প্রধান ‍উপদেষ্টা

১৪

দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : প্রধান উপদেষ্টা

১৫

গুলশানে ফেলানীর নামে সড়কের নামফলক উন্মোচন

১৬

‘আমিও তো কারও ভাই ও বাবা’, অটোরিকশায় লেখা নোট ভাইরাল

১৭

বিয়ের ২ ঘণ্টা আগে কনের সাজেই প্রেমিকের কাছে ছুটলেন তরুণী

১৮

খাওয়ার পর করা এই ৮ কাজ ডেকে আনবে বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞ

১৯

নিখোঁজের ২৪ দিন পর ড্রেনে মিলল হাফেজ আব্দুল্লাহর মরদেহ

২০
X