সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কুমিল্লা উত্তর জেলা ও মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের কুমিল্লা নগরীর একটি হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে নগরীর রেসকোর্স এলাকায় অবস্থিত আখন্দ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানেও দুর্ঘটনায় আহত ৩ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত শনিবার (২২ জুলাই) ডিএসবি সদস্য পরিচয় দিয়ে সকালে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকার আখন্দ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন নেতাকর্মীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে ২০ জুলাই এ ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রের লিখিত রেকর্ড রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করে।
আকন্দ জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার মো. নাছির উদ্দিন ইকবাল জানান, ‘১৪ জুলাই দুপুরে প্রায় ৩০ জন ব্যক্তি শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসে এবং কোনো এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে তারা হাসপাতালে এন্ট্রি নেন। পরে তাদের মধ্যে ৯ জনকে ভর্তি রেখে সেদিনই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাকিদের ছেড়ে দেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি রোগীদের হাসপাতালে দেখতে আসা লোকদের থেকে জানতে পারেন- আহত ব্যক্তিরা বিএনপির দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে সংঘর্ষে আহত হন। পরে কিছুটা সুস্থ্ হওয়ায় আহতদের ২০ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ ৩ জনকে রেখে বাকি ৬ জনকে ছেড়ে দেন। ২১ জুলাই রাতে শারীরিক চেকআপ করার জন্য পুনরায় কয়েকজন রোগী হাসপাতালে আসে এবং বেড নিয়ে রাত কাটায়।
অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার (২২ জুলাই) সকালে আখন্দ হাসপাতালে সাদা পোশাকধারী ৩ জন ব্যক্তি ডিএসবি সদস্য পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হবে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানেন কিনা জানতে চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনের কোনো তথ্য নেই বলে পরিচয়ধারী গোয়েন্দা সদস্যদের জানান।
পরে সাদা পোশাকধারীরা হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের যথাযথ যত্ন নিতে বলে চলে যান। নাছির উদ্দিন ইকবাল আরও জানান, ওই সময়ে হাসপাতালে পুলিশ এসেছে এ খবর শুনে শুক্রবার রাতে চেকআপ করতে এসে বেডে থাকা কয়েকজন রোগী তাড়াহুড়া করে কাউকে কিছু না বলে হাসপাতাল ছেড়ে যান।
পুলিশ কর্তৃক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন রোগী বের করে দেওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ প্রসঙ্গে ম্যানেজার ইকবাল জানান, এ বিষয়ে মিডিয়ায় কী প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আর তাদের চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ এ ধরনের কোনো কথা বলেননি। হাসপাতালের চেয়ারম্যান কাজী তাহমিনা আক্তার ওই দিন হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
তবে হাসপাতালে রোগীদের কাগজপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ঘটনায় আহত ভর্তিকৃত সব রোগীকে বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কোনো রোগী চিকিৎসাধীন থাকার রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ২১ তারিখ রাতে চেকআপ করতে আসা রোগীদের ভর্তির কোনো রেকর্ডও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কোনো সদস্য হাসপাতালে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান কাজী তাহমিনা আক্তারকে মিডিয়ায় প্রকাশিত বিষয়টিসহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি তার চেম্বারের দরজা বন্ধ করে দেন।
মন্তব্য করুন