দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল।
বুধবার (১৭ জুলাই) মাহফিলের শেষদিনে হাজারো আহলে বায়তপ্রেমী জনতার ঢল নামে। মাহফিল থেকে স্বাধীন সার্বভৗম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানসহ বিশ্বের নিপীড়িত নিগৃহীত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদ ৩৯ তম মাহফিলের আয়োজন করে।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, কারবালা ময়দানে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। তিনি মানবিক ইসলামের পতাকাই উড্ডীন করে গেছেন। ইয়াজিদ চির অভিশপ্ত; আর হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) জান্নাতের যুবকদের সর্দার। তাদের পদাংক অনুসরণের মাধ্যমে আমরা নাজাত পেতে পারি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কারবালা প্রান্তরে ইসলাম দুইভাগে বিভক্ত হয়েছিল। একদিকে মানবিক ইনসাফের পতাকা হাতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। অন্যদিকে ইসলামের ধ্বজাধারী সহিংস ইসলামের ধারক ছিল ইয়াজিদ। ফলে সে ধিকৃত ও নিন্দার পাত্র হয়ে আছে।
সভাপতির বক্তব্যে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘নামাজে আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) স্মরণ করা আল্লাহ পাক ফরজ করে দিয়েছেন। তাদের স্মরণ করলেই নামাজ ইবাদত আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সমস্ত কিছু দেখছেন তা মনে থাকলে মানুষ কখনো অন্যায় পাপ কাজে জড়াতে পারে না। যে ব্যক্তি অন্তরকে বিশুদ্ধ করেছে সেই সফলকাম। সত্য কথা বলা, ওয়াদা রক্ষা করা, আমানতের খেয়ানত না করা, অবৈধ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, দৃষ্টিকে সংযত রাখা এটাই একজন ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। তিনি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রবর্তক আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরীরের (র.) অবদানের কথা স্মরণ করেন।’
বিদেশি আলোচক ছিলেন ইরাক বাগদাদ শরীফ বড়পীর শেখ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানির (রা.) বংশধর শাহ্ সূফি আল্লামা সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল-জিলানি আল-বাগদাদী।
তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মর্যাদা ও সম্মান বুলন্দ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং প্রিয় নবী (দ.)। তাই তাদেরকে স্মরণ করা এবং তাদের মহব্বত করাই ফরজ। এই মাহফিল চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আল্লামা আফিফ জিলানির বক্তব্য বাংলায় ভাষান্তর করে শোনান ড. আল্লামা সাইফুল ইসলাম আজহারি।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন বড় পীরের বংশধর শাহজাদা সৈয়দ আবদুর রহমান জিলানি, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল মহসিন মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, ব্যারিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম, ব্যাংকার ইসকান্দর আলম ও আবু সাঈদ মোহাম্মদ হামেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দীন। আলোচক ছিলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা সাইফুল আজম বাবর আল আযহারী।
ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরা, বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদনশীনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, দিলশাদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন