গত কয়েক দিনের কোটা আন্দোলনে উদ্ভূত সহিংসতায় নারায়ণগঞ্জ যেন এক বিধ্বস্ত নগরী । দুর্বৃত্তদের তাণ্ডব, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে অভাবনীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ৮টি প্রতিষ্ঠানসহ অর্ধশতাধিক বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এসব ঘটনায় পুলিশের ৩৫ ও ৪ সাংবাদিকসহ মোট অর্ধশত আহত হয়েছেন।
সহিংসতার এসব ঘটনায় জেলার প্রত্যেক থানায় ৬০-৭০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত জেলাজুড়ে চিরুনি অভিযানে ২০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরইমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দিয়েছে।
জানা যায়, জেলা পাসপোর্ট অফিস, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। গত ১৯ জুলাই রাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় পাসপোর্ট অফিসে অগ্নিসংযোগ করে প্রায় ৮ হাজার পাসপোর্টসহ তথ্য সংগ্রহ করা সার্ভার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পাসপোর্ট অফিসের কয়েক গজ দূরে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে দুই দফা হামলা চালিয়ে (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ভবনে অগ্নিসংযোগ করে ভাংচুর চালানো হয়। ওই সময় ডিভাইস সংযোজিত গাড়িসহ ৩টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানো হয় মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কাগজ। বাদ যায়নি হাসপাতালও।
একই সড়কের জালকুড়ি বিজিবি ক্যাম্প লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ শীতল এসি বাসের ২৬টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মালিকপক্ষ প্রায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। বিজিবি ক্যাম্পের বিপরীত দিকে একটু সামনে শিল্প পুলিশ ক্যাম্প, আনসার বাহিনী ক্যাম্প, জালকুড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জালকুড়ি এসবি গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়।
ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ‘হাই স্পিড’নামে একটি স্পিডবোট কারখানায় অগ্নিসংযোগে করে দুর্বৃত্তকারীরা। তারা সাইনবোর্ডে ইব্রাহীম শপিং কমপ্লেক্স ও প্রিয়ম নিবাসের ১০ তলা ভবনের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও মার্কেটে আগুন দেয়। এ ছাড়া প্রিয়ম নিবাস লগোয়া হাইওয়ে ট্রাফিকের পুলিশ ব্যারাকে অগ্নিসংযোগ, চিটাগাং রোডে মিতালী মার্কেট, সৌদি বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, হামদার্দ বিল্ডিং, এস এন সুপার মার্কেট ও ফজর আলী গার্ডেনে ভাঙচুর-লুটপাট চালানো হয়। একই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ড এলাকায় কভার্ডভ্যান, সিমেন্ট কোম্পানির ৮টি কংক্রিট মিকচার ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের তৈরি বঙ্গবন্ধু মূর্যাল ভাঙচুরসহ শহরের নিতাইগঞ্জ ও মণ্ডলপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন, শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় নারায়ণগঞ্জ ও জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, ২নং রেলগেটে পুলিশ বক্স, ২নং রেলগেট রেলওয়ে লাইনম্যান অফিস, শহরের ডিআইটি চুনকা পাঠাগার ও সিনেপ্লেক্স কক্ষে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, এ অন্দোলনে ছাত্রদের ঢাল বানিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব চালায়। ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আমরা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে তদন্ত করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারনে তালিকা হচ্ছে। নাশকতা ঠেকাতে গিয়ে আহত ৩৫ পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
সহিসংহতায় কতগুলো গাড়ি, প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তদন্তের পর বলা যাবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন।
মন্তব্য করুন